জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে নিন

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশে ৪ দিনের সফর শেষ করার আগে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। যদিও এর আগে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি এখানে সমালোচনা করতে নয়; আলোচনা করতে এসেছেন। তবে তিনি নিজের মতো করে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা করেছেন, যা জেনে আমাদের ভালো লেগেছে। 

এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে গত এক দশক ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে চলতে থাকা লড়াইয়ে নৈতিকভাবে শক্তি যুগিয়েছেন। দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের 'ক্রমবর্ধমান ও উদ্বেগজনক' অভিযোগের বিষয়ে তার অবস্থানও আমরা বুঝতে পেরেছি।

গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাচেলেট এই অভিযোগগুলোর পাশাপাশি যথাযথ প্রক্রিয়া ও আইনি সুরক্ষার অভাবের বিষয়টিকে 'গভীর উদ্বেগ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারকেও বিষয়টি অবহিত করেছেন।

তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশে নাগরিকদের কথা বলার জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে, নজরদারি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ভয়ভীতি প্রদর্শন বেড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে নাগরিকরা নিজেরাই নিজেদের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করছেন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিবেদনগুলোতে এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। 

তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা বলেছেন এবং কীভাবে আইন ও বিধির মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সীমিত করা হচ্ছে তার উল্লেখ করেছেন। তিনি প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমাতে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের আশ্রয় না নেওয়ার কথা বলেছেন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষকে সহিংসতা থেকে রক্ষা করার গুরুত্বের ওপরেও জোর দিয়েছেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগগুলো 'নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছতার' সঙ্গে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি 'বিশেষ ব্যবস্থা' গঠনে সহায়তার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন প্রস্তুত আছে বলেও তিনি জানান।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি তার এ আহ্বান শুনবে? এখন পর্যন্ত সরকারের মন্ত্রীরা গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ নির্দ্বিধায় অস্বীকার করে যাচ্ছেন। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যায়- এসব যে ঘটে থাকে, তা স্বীকার করার কোনো ইচ্ছাই নেই তাদের। নিরপেক্ষ তদন্ত করা দূরে থাক, যদি এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপনও করা হয় তাহলেও তারা স্পষ্ট করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও কখনো বলেননি। 

যদি লুকানোর কিছু না-ই থাকে, তবে তারা কেন এ বিষয়টি এড়িয়ে যান? তদন্ত হলে কী বেরিয়ে আসবে বলে তারা আশঙ্কা করেন? ক্ষমতার অপব্যবহারের অসংখ্য অভিযোগ থাকায় ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সরকারকে অন্তত অভিযোগগুলো স্বীকার করে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

এসব বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সরকারের অস্বীকৃতি ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থার প্রতি অবমাননার শামিল। এর মাধ্যমে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তিতে সহযোগিতা করা হয়। মানবাধিকার রক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদের বাছাই করা না হলে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জবাবদিহির আওতায় না আনতে পারলে, এ ব্যর্থতা গণতন্ত্র এবং এর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সব কিছুর প্রতি অবমাননা।   

নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোনো মানে নেই। বহু বছর ধরে রাজনৈতিক কূটকৌশলের কারণে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো ধরনের জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয় না বললেই চলে। এ ধরনের অবস্থা সারাজীবন চলতে পারে না।

আমরা সরকারকে এ ধরনের ক্ষতিকর চর্চা ত্যাগ করতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগ তদন্ত করতে একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা চালুর আহ্বান জানাই। মানবাধিকারের বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি কেবল মুখে থাকলেই চলবে না, এর প্রমাণও দেখানো চাই।

Comments

The Daily Star  | English

Hopes run high as DU goes to vote today

The much-anticipated Ducsu and hall union elections are set to be held today after a six-year pause, bringing renewed hope for campus democracy.

6h ago