সিরিয়ার আকাশে নতুন সূর্যোদয়

দামেস্কের পথে পথে আসাদের পতনের উদযাপন করে সিরিয়রা। ছবি: এএফপি
দামেস্কের পথে পথে আসাদের পতনের উদযাপন করে সিরিয়রা। ছবি: এএফপি

৮ ডিসেম্বর অবসান হয়েছে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের নির্মম শাসন। অবশেষে সিরিয়ার মানুষ নিজেদের দেশের পুনর্গঠনের সুযোগ পেয়েছে।

কয়েকটি ইসলামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা রাজধানী দামেস্কে ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুকে পড়লে বাধ্য হয়ে আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যান। বিদ্রোহীদের এই অসামান্য উদ্যোগের মুখে দেশটিতে বাথ পার্টির পাঁচ দশকের শাসনামলের অবসান ঘটে। ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে আসাদের বাহিনী নির্দয়ভাবে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়েছে। তবে মজার বিষয় হল, বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের আকস্মিক আগ্রাসনের মুখে মাত্র ১১ দিনেই আসাদের সরকারের পতন ঘটে। কয়েক সপ্তাহ আগেও সিরিয়ার ভাগ্যের এমন নাটকীয় পরিবর্তনের বিষয়টি কেউ ভাবতে পারেনি। সরকার পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যে চলমান চূড়ান্ত গোলযোগপূর্ণ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝে এক ক্রান্তিলগ্নে এসে উপস্থিত হয়েছে সিরিয়া।

আসাদকে উৎখাত করার পর দামেস্কের সড়কগুলোতে অসংখ্য মানুষকে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। জানা গেছে, কুখ্যাত কারাগার ও অন্যান্য প্রশ্নবিদ্ধ স্থাপনায় আটকে রাখা মানুষদের মুক্তি দিয়েছে বিদ্রোহীরা। কার্যত, আসাদের শাসনামলের অবসান ঘটে যখন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের বিদ্রোহী সংগঠনটি কৌশলগত দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর হোমসের দখল নেয়। এইচটিএসকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে অসংখ্য পশ্চিমা দেশ ও রাশিয়া সহ অন্যরাও। তবে এইচটিএস ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এই বাস্তবতাকে মাথায় রেখে, জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত কর্মকর্তারা অনুরোধ করেছেন, যারা নতুন করে দেশটির দায়িত্ব নিচ্ছেন, তারা যেন আসাদের শাসনামলের নিন্দনীয় কাজগুলোর পুনরাবৃত্তি না করেন।

বিদ্রোহীদের সর্বশেষ এই হামলার শুরু থেকে অন্তত ৯১০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে ১৩৮ জন বেসামরিক মানুষ। কম করে হিসেব করলেও, সিরিয়ার যুদ্ধে ইতোমধ্যে পাঁচ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ তাদের নিজ বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, সবচেয়ে জরুরি হল আগের সরকার পতনের পর দেশটি যাতে পুরনো ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। স্থিতিশীলতা অর্জনের প্রথম ধাপ হতে পারে সহিংসতার অবসান। সিরিয়ার সবগুলো রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীকে আলোচনার মাধ্যমে এমন এক সমাধানে পৌঁছাতে হবে যাতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। পাশাপাশি, আরও একটি জরুরি বিষয় হল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর এবং দেশটিতে জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে নির্যাতনের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখা।

আসাদ তার নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনেক নির্দয় আচরণ করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, শুধু অভ্যন্তরীণ অনুঘটক নয়, বাইরের শক্তিও তার সরকারের পতনে ভূমিকা রেখেছে। বিগত বছরগুলোতে সিরিয়া ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। বাইরের শক্তিগুলো দেশটির চলমান সঙ্কটের ফায়দা নিয়ে নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধির লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল, যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায়। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হতে না হতেই ইসরায়েল গোলান মালভূমিতে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে সেখানে একটি বাফার জোন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে যে ইসরায়েল আবারও সিরিয়ায় বোমা হামলা শুরু করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং এতে সিরিয়া ও সার্বিকভাবে, সমগ্র অঞ্চলের অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়েছে।

সিরিয়ার মানুষ বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে গেছে। এর জন্য দেশের ভেতরের শক্তিগুলো যেমন দায়ী, তেমনি বাইরের শক্তিরও দায় অনেক। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা খুবই জরুরি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ত্রাণ ও সিরিয়ার পুনর্নির্মাণের জন্য তহবিল নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু একইসঙ্গে, দেশটিকে তাদের ভূরাজনৈতিক দাবার চালের গুটি হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতাও বন্ধ করতে হবে। সিরিয়ার ভবিষ্যত সিরিয়ার মানুষকেই নির্ধারণ করতে হবে। একমাত্র তা হলেই দেশটি প্রকৃত অর্থে নির্দয় স্বৈরশাসক উৎখাতের সুবিধা নিতে পারবে।  

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

2h ago