অবহেলাটা কষ্ট দেয়: মার্শাল

Marshall Ayub

তুষার ইমরান, নাঈম ইসলাম ও মুমিনুল হকের পর চতুর্থ বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মার্শাল আইয়ুব। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটার ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ জার্সি গায়ে মাত্র তিনটি টেস্ট খেললেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরও দ্বিতীয় সুযোগ আর পাননি। ৩৬ বছর বয়েসী মার্শাল দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন তার এই মাইলফলক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হতাশা এবং নিজের যাত্রার নানা দিক নিয়ে।

এই অর্জনটা কতটা তৃপ্তির?

মার্শাল আইয়ুব: অবশ্যই এটা আমার জন্য বড় এক অর্জন। বাংলাদেশে হাতে গোনা চার-পাঁচজন ক্রিকেটারই এ পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছে। আমরা কয়েকজন—ফরহাদ হোসেন, শামসুর রহমান আর আমি—সবাই ৯ হাজার রানের কাছাকাছি ছিলাম। আমরা বলতাম, ১০ হাজার রান বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে বড় এক মাইলফলক। তাই এটা ছুঁতে পারায় খুবই খুশি।

এই মাইলফলকে পৌঁছানো কতটা কঠিন ছিল?

মার্শাল: যখন শুরু করেছিলাম, এনসিএলে (জাতীয় ক্রিকেট লিগ) আমরা ১০টা চারদিনের ম্যাচ খেলতাম। এখন সেখানে সাতটা ম্যাচ হয়, আর বিসিএলে (বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ) খেললে আরও কয়েকটা হয়—তাও আবার টুর্নামেন্ট হলে (গত মৌসুমে হয়নি)। গত চার-পাঁচ বছরে বৃষ্টি প্রায়ই দুই-তিনটা ম্যাচ নষ্ট করে দিয়েছে। এসব ব্যাঘাত আর ম্যাচ কমে যাওয়ায় কাজটা কঠিন হয়ে গেছে। আরও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল গত চার-পাঁচ বছর ধরে ডিউক বলে খেলা। এই বলে বেশি সুইং হয়, পেসাররা বাড়তি সুবিধা পায়, তাই বড় ইনিংস কম দেখা যায়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ফিটনেস ধরে রাখাও কঠিন। সব মিলিয়ে ১০ হাজার রান করা সব দিক থেকেই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।

আপনি যেহেতু মূলত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটই খেলেন, অফ সিজনে কীভাবে নিজেকে ঠিক রাখেন?

মার্শাল: ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শেষ হলে আমরা সাধারণত এক থেকে দেড় মাস বিশ্রাম নিই। তারপর ফিটনেস আর স্কিল—দুটোর ওপরই কাজ করি।

আগে সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীর মতো শহরে লিগ হতো। কিন্তু বহু বছর ধরে সেগুলো নিয়মিত হচ্ছে না। তাই অফ সিজনে বেশির ভাগ সময়ই ফিটনেসেই কাটে। গত দুই-তিন বছর ধরে আমি [ইয়াকুব চৌধুরী] ডালিম ভাইয়ের সঙ্গে ট্রেনিং করছি; উনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। এভাবেই অফ সিজন কাটে।

আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার খুব ছোট ছিল।

মার্শাল: আমাকে ২০১৪–১৫ সালের দিকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর বিসিএল আর এনসিএলে আমি সবচেয়ে বেশি রান করেছি, তবুও আর ডাক আসেনি। দুই বছর ধরে নিয়মিত পারফর্ম করেও কিছুই হলো না। এটা ভাবলে এখনও কষ্ট লাগে। ২০১২–১৩ মৌসুমে এক মৌসুমে ১,০০০ রানের বেশি করি, দুইটা ডাবল সেঞ্চুরিও ছিল। কারও ইনজুরির কারণে আমি দলে ঢুকেছিলাম। তার পর সিলেক্টররা আমাকে ধীরে ধীরে একেবারে সরিয়ে দিলেন। বাদ যাওয়ার পরের দুই বছর নিয়মিত পারফর্ম করেও কিছুই হলো না। তখনই বোঝা যায় যে সিলেক্টরদের পরিকল্পনায় আমি নেই। আমাদের মতো খেলোয়াড়দের সুবিধা কম। ঢাকায় বড় হয়েছি, তবুও কখনো কখনো মিরপুরের ইনডোর সুবিধা ব্যবহার করতে পারতাম না। আরও সুযোগ-সুবিধা পেলে হয়তো এক-দুই মৌসুম আগেই ১০ হাজার রান করতে পারতাম। অবহেলাটা কষ্ট দেয়।

তুলনামূলকভাবে এখনকার তরুণরা যেমন সুযোগ পায়, আপনি তেমনটা পাননি।

মার্শাল: অবশ্যই। আমি মিডল অর্ডারের ব্যাটার, কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাকে তিন নম্বরে খেলানো হয়েছিল। নিজের পছন্দের পজিশনে ব্যাট করার সুযোগ পাইনি। কখনো কখনো এটা খুবই কষ্ট দেয়। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ—আমি অভিযোগ করি না। নিজেকেই দোষ দিই। ওই ম্যাচগুলোতে ৩০–৪০ রান করে আউট না হলে যদি কিছু বড় ইনিংস খেলতে পারতাম, তাহলে হয়তো আরও ম্যাচ খেলতে পারতাম।

তরুণরা এখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আগ্রহ কম দেখায় কেন?

মার্শাল: যারা সব ফরম্যাট খেলেন, তাদের জন্য চার দিনের ম্যাচ খেলা কঠিন। তারা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চান। আরেকটা বড় কারণ ম্যাচ ফি—যা অন্য দেশের তুলনায় কম। একজন তরুণ বাইরে টি২০ খেলে প্রায় একই রকম টাকা আয় করতে পারে। এনসিএলে তো টি২০র ম্যাচ ফি ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়েছে, আর চার দিনের ম্যাচে পাই ৮০ হাজার। চারদিন মাঠে কাটিয়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা বেশি! এখনকার ক্রিকেট সাদা বল ঘিরে। তাই তরুণরা স্বাভাবিকভাবেই সেদিকেই ঝুঁকে। এজন্য চার দিনের ক্রিকেটে আগ্রহ কম।

বর্তমান ঘরোয়া ক্রিকেটের মান কেমন দেখছেন?

মার্শাল: আমরা যখন শুরু করেছি, সিনিয়ররা বলতেন উইকেট ভালো নয়—স্পিনারদের বেশি সুবিধা থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে উইকেট কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আমরা ২৫ বছর ধরে টেস্ট খেলছি, অথচ আমাদের প্রথম শ্রেণীর উইকেট গত দুই-তিন বছরেই কিছুটা ভালো হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেট উপভোগ করতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে স্পোর্টিং উইকেট লাগবেই। আর যদি ম্যাচ ফি বাড়ানো যায়, খেলোয়াড়রাও চার দিনের ক্রিকেট নিয়ে আরও সিরিয়াস হবে।

কতদিন খেলা চালিয়ে যেতে চান?

মার্শাল: গত সাত-আট বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে ভাবছিই না। পরিবারই এখন আমার অনুপ্রেরণা; কখনো তারা দেখে, আমার বাচ্চারাও উপভোগ করে—এটাই আমাকে খেলতে প্রেরণা দেয়। আমাদের মতো খেলোয়াড়—নাঈম ভাই, শুভ (শামসুর রহমান)—একটা খারাপ বছর গেলেই মানুষ বলে সময় শেষ। তাই এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেই। যতদিন খেলাটা উপভোগ করব, ততদিন লাল বলের ক্রিকেট খেলতে চাই।

Comments

The Daily Star  | English
Sharif Osman Hadi dies in Singapore

Sharif Osman Hadi no more

Inqilab Moncho spokesperson dies in Singapore hospital

15h ago