সিলেট টেস্ট

তাইজুলের স্পিন ভেলকিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

নাঈম হাসানের বলে ড্যারিল মিচেলের ক্যাচ উঠল ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে। ঝাঁপিয়ে পড়ে তা দারুণ কায়দায় লুফে নিলেন তাইজুল ইসলাম। এরপর বাঁহাতি স্পিনের ভেলকিতে বাকি থাকা দুটি উইকেট নিলেন তিনি। সব মিলিয়ে তার ১০ উইকেট প্রাপ্তির টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে স্মরণীয় জয় পেল বাংলাদেশ।

শনিবার সিলেট টেস্টের পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনে কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে ১৮১ রানে। ফলে ১৫০ রানের বড় জয় নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা। এতে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্ত করলেন শুভ সূচনা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রও জয়ের আনন্দে শুরু করল টাইগাররা। দুই ম্যাচের সিরিজে তারা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

বাংলাদেশের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখে ম্যাচসেরা হলেন তাইজুল। প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট পেলেন ৭৫ রানে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ টেস্টে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় জয়, দেশের মাটিতে প্রথম। এর আগে এখানে দুই দলের ছয় টেস্টের তিনটি জিতেছিল কিউইরা, বাকি তিনটি হয়েছিল ড্র। তাছাড়া, সিলেটের মাঠেও দুটি টেস্ট খেলে এই প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সব মিলিয়ে ১৩৯ টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের সংখ্যা বেড়ে হলো ১৯টি। আর দেশের মাটিতে ৭৪ টেস্টে এটি তাদের ত্রয়োদশ জয়। ঘরের মাঠে সপ্তম প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টেস্ট জিতল টাইগাররা। এর আগে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় ছিল তাদের।

উইকেটের খোঁজে থাকা বাংলাদেশ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে চাপ তৈরির চেষ্টা করে। দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণে আসেন আগের দিন দারুণ বল করা তাইজুল ও নাঈম। দুজনের বোলিংয়ের সময়ই চারজন করে ফিল্ডার রাখা হয় ব্যাটারদের আশেপাশে। তাইজুল দুটি স্লিপ এবং একটি করে সিলি পয়েন্ট ও শর্ট লেগ রেখে বল করতে থাকেন। নাঈম ব্যবহার করেন একটি করে স্লিপ, লেগ স্লিপ, শর্ট লেগ ও সিলি পয়েন্ট।

আগের দিনের ৭ উইকেটে ১১৩ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল কিউইরা। দিনের প্রথম ওভারেই একটি চার মারেন মিচেল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মিড-অফ দিয়ে বল সীমানার বাইরে পাঠান তিনি। তবে এই ইতিবাচক অ্যাপ্রোচ জারি রাখতে পারেননি তিনি। তাকে রক্ষণে মনোযোগী হতে বাধ্য করেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। আগের দিনের আরেক অপরাজিত ব্যাটার ইশ সোধি কেবল উইকেটে টিকে থাকার মন্ত্র বহাল রাখেন।

সতীর্থ ব্যাটারদের ব্যর্থতার মাঝে নিউজিল্যান্ডের একমাত্র ব্যতিক্রম মিচেল ফিফটি স্পর্শ করেন ৯৯ বলে। এরপর অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি। মিচেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয়ের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটাটি সরিয়ে দেন নাঈম। ১২০ বলে সাত চারে ৫৮ রানে থামেন মিচেল। সুইপ করার চেষ্টায় বাড়তি বাউন্সে কুপোকাত হন তিনি। টপ এজ হয়ে উপরে উঠে যাওয়া বল লুফে নেন তাইজুল।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

এই উইকেটের পেছনে কৃতিত্ব দিতে হয় শান্তকে। সাধারণত ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ফিল্ডার যে অবস্থানে থাকেন, সেটার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন অবস্থানে রেখেছিলেন তাইজুলকে। পরিকল্পনা কাজে লাগায় তৃপ্তি থাকবে বাংলাদেশ অধিনায়কের।

প্রথম আধা ঘণ্টা কোনো সাফল্য না পাওয়ার পর মিচেল বিদায় নিলে নিউজিল্যান্ডকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিন্তু অপেক্ষা বাড়ান টিম সাউদি ও সোধি। নবম উইকেটে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৫২ বলে ৪৬ রানের জুটি গড়েন তারা।

হার প্রায় নিশ্চিত। সাউদি তাই গুটিয়ে না থেকে পাল্টা আক্রমণে নামেন। তার কারণে হারের ব্যবধান কিছুটা কমায় সফরকারীরা। ২৪ বলে এক চার ও দুই ছক্কায় ৩৪ রান করা কিউই দলনেতা সাউদিকে রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে ফেরান তাইজুল। জাকির হাসান ক্যাচ নিলে পূরণ হয় তার ৫ উইকেট। ৪৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১২ বার ফাইফার পেলেন তাইজুল।

এদিনের ২৩তম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে ষষ্ঠ শিকার ধরে নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করেন তাইজুলই। তার টার্নিং ডেলিভারি সোধির ব্যাটের উপরের দিকে লেগে জমা পড়ে সিলি মিড অফে থাকা জাকিরের হাতে। লম্বা সময় ক্রিজে থাকা সোধি শেষমেশ ৯১ বলে ২২ রানে আটকে যান।

বাংলাদেশ দলের জয়োল্লাসের পাশাপাশি তাইজুলের ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলি আরও সমৃদ্ধ হয় এই উইকেট প্রাপ্তির মাধ্যমে। কোনো টেস্টে দ্বিতীয়বারের মতো ১০ উইকেট শিকারের মধুর স্বাদ নিলেন তিনি। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটেই ২০১৮ সালে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে যদিও হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এদিন আর দলকে পা হড়কাতে দেননি তাইজুল।

Comments

The Daily Star  | English

Army seizes firearms, explosives from Banalata Express in Dhaka

Four suspects have been handed over to police for primary interrogation, ISPR says

34m ago