বোলাররা কতবার ‘ফিফটি’ করেছেন এবারের আইপিএলে?

আইপিএলে এবার বোলারদের এমন হতাশার ছবি দেখা গেছে নিয়মিত

টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের জীবনে ভালো দিনের চেয়ে খারাপ দিনই আসে বেশি। কোনো ম্যাচে একজন বোলারের ৪০ রান খরচ করা সাধারণ বিষয়ের দিকেই ধাবিত হচ্ছে আজকাল। উইকেট আদায়ে রান খরচের অস্বস্তি তবু কমে কিছুটা, তা না হলে চল্লিশ রান দিয়ে অন্তত সুখকর অনুভূতি হবে না নিশ্চিতভাবেই। আর ভাবুন তো, একজন বোলার পঞ্চাশ রান দিয়ে যখন ফিরবেন ঘরে, সেই দিনটা তার কেমন কাটবে? দুঃস্বপ্ন হয়েই কি স্পেলটা উঁকি দিবে না তার মনে? 

অনেকের পুরো ক্যারিয়ারেই তো এমন দুঃস্বপ্নের দিন আসে হাতেগোনা কয়েকবার। তবে এবারের আইপিএলে যা হলো, তাতে এই আসরকে 'বোলারদের দুঃস্বপ্ন' নাম দেওয়া যায় অনায়াসেই। একটি ম্যাচে পঞ্চাশ বা তার বেশি রান দিয়ে ফেলেছেন কোনো বোলার, এমনটা হয়েছে সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে ৫২ বার! 

সংখ্যাটা যে চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতোই, আগের আসরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রথম ছয় আইপিএল মিলিয়ে কতবার বোলারদের উপর পঞ্চাশ রানের মার পড়েছিল জানেন? এক ২০২৪ আইপিএলেরই সমান, ৫২ বার।

প্রথম আইপিএলে ১২ বার বোলাররা ইনিংসে অন্তত ৫০ রান দিয়েছেন। এরপরের চার মৌসুমের প্রত্যেকটিতেই দশের কম সংখ্যকবার বোলারদের জীবনে এমন দুঃস্বপ্নের দিন হাজির হয়েছে। ২০০৮ সালের পর ২০১৩ সালে গিয়ে আবার বোলিংয়ে ফিফটি দেখা গিয়েছিল দশের বেশি সংখ্যক বার (১২)।

বলতে পারেন, শুরুর দিককার ওই সময়ের টি-টোয়েন্টিতে রানের ফোয়ারা ছুটত না এখনকার মতো। ঠিক, তাহলে গত কয়েক আসরের দিকেই তাকানো যাক। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ে গত আসর থেকে শুরু হয়েছে খেলা। গতবারের আইপিএলে তবুও ৩১ বারের বেশি বোলিংয়ে ফিফটি করতে দেখা যায়নি। এর আগের মৌসুম, অর্থাৎ ২০২২ আইপিএলেই তো প্রথমবারের মতো ২৫ ইনিংসে বোলারদের কমপক্ষে পঞ্চাশ রান দিতে দেখা গিয়েছিল। আর ২০১৮ থেকে ২০২১ আইপিএল পর্যন্ত- কোন আসরেই ২২ বারের বেশি পঞ্চাশ রান বিলিয়ে যাননি বোলাররা।

খেলা দেখেননি এমন কাউকে আপনি মজা করে হয়তো বলেছেন কখনো, ভুবনেশ্বর কুমার ফিফটি করে ফেলেছেন। যাকে বললেন, তিনি অবাক। পরক্ষণেই জানালেন- আরে না, বোলিংয়ে ফিফটি করেছে। এমন কৌতুকের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আপনার আছে। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে এত এত পঞ্চাশ রানের মার পড়েছে বোলারদের উপর, এই কৌতুকের অস্তিত্ব নাই হয়ে যাওয়ার কথা।

অথচ এক মৌসুমে বিশবার বোলিংয়ে ফিফটি করেছেন বোলাররা, সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হয়েছে একেবারে দশম আইপিএল পর্যন্ত। প্রথম ছয় আইপিএলের কোনটিতেই তো ১২ বারের বেশি বোলিংয়ে ফিফটি হয়নি। প্রথম ছয় আসরের পরেও তরতরিয়ে বেড়ে উঠেনি বোলিংয়ে ফিফটির পরিমাণ৷ ২০১৪ আইপিএল থেকে ২০১৭ আইপিএল- এই চার আসরেই বিশের কম সংখ্যক বার বোলাররা ইনিংসে পঞ্চাশ রান দিয়েছেন, সর্বোচ্চ ১৭ বার।

এবারের আসরে সংখ্যাটা এক লাফেই ছাড়িয়ে গেছে ক্রিকেটবিশ্বের সব টুর্নামেন্টকেই। ভুক্তভোগী আসলে হয়েছেন ৩৮ জন। ২০২৪ আইপিএলে ২৬ জন বোলার শুধু একবার বল হাতে ফিফটি করেছেন। আর বাকি ১২ জন মিলেই আরও ২৬ বার। তার মধ্যে ১০ জনের এমন দিন পার করতে হয়েছে দুবার করে। যে দশজনের মধ্যে আছেন মোস্তাফিজুর রহমানও। আর সবচেয়ে বেশি তিন ম্যাচে পঞ্চাশ রান দিয়েছেন দুজন বোলার। সেই দুজন হচ্ছেন মিচেল স্টার্ক ও ভুবনেশ্বর কুমার।

ফ্র‍্যাঞ্চাইজি, ঘরোয়া, আন্তর্জাতিক- পৃথিবীর আর কোন টুর্নামেন্টেই এত বেশিবার বোলিংয়ে দুঃস্বপ্নের দিন হাজির হয়নি। একমাত্র ভাইটালিটি ব্লাস্টে সংখ্যাটা পঞ্চাশ ছুঁতে পেরেছিল। ইংল্যান্ডের ১৮ দলের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে দুবার তা হয়েছিল, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে। কিন্তু ব্লাষ্টে একশ ত্রিশের বেশি ম্যাচ খেলা হয়। এই তথ্যে খেয়াল রাখলে আরও একবার স্পষ্ট হয়, এবারের আইপিএলে কতবড় ঝড় বয়ে গেছে বোলারদের উপর।

মোহাম্মদ সিরাজের মুখে তো একবার নিরুপায় হওয়ার ভাবই ফুটে উঠেছিল, 'সত্যি বলতে, ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারটা প্রথমে তুলে নিন স্যার। কারণ বোলারদের জন্য অনেক কঠিন হচ্ছে, এত ফ্ল্যাট উইকেট। আর আগে আপনি দেখতেন পাওয়ারপ্লেতে উইকেট গেলে রানের গতি কমে আসতো, কিন্তু এখন সবাই মাথায় কাফন পরে আসছে, শুধু মেরেই যাচ্ছে।'

সিরাজের অবশ্য ভাগ্য ভালো, সবশেষ আইপিএলে পঞ্চাশ রানের মার পড়েনি তার উপর একবারও। এমনিতে এর আগে তিনবার এমন দুর্দিনের দেখা পেয়েছেন তিনি। ১৭তম আইপিএল অভিজ্ঞতাটা আরও অনেক বোলারদের জীবনে দিয়েছে যেমন, অনেক পুরোনোদেরও আবার সেই দিন ফিরিয়ে দিয়েছে। দুঃস্বপ্নের দিনের নিয়মিত আনাগোনাই চলেছে, তাইতো এবারের আইপিএলকে নাম দেওয়াই যায়- বোলারদের দুঃস্বপ্ন!

Comments

The Daily Star  | English

One killed as bearing pad of metro rail falls at Farmgate, train operations halted

As a safety measure, metro rail services remain suspended from 12:30pm, Dhaka Mass Transit Company Limited official says

33m ago