নির্বাচকদের 'আশা' এইবার কাজে দেবে বিজয় কার্ড

এনামুল হক বিজয়ের নাম জাতীয় দলে উঠে এলেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ২০১৩ সালে টেস্ট অভিষেকের পর দীর্ঘ ১২ বছরে তিনি খেলেছেন ৫টি টেস্ট ম্যাচ, যেখানে তার গড় মাত্র ১০। তাই যখনই তিনি ফেরেন, আশার চেয়ে প্রশ্নই ওঠে বেশি।

বিজয়ের ঘরোয়া রেকর্ড ঈর্ষণীয় হলেও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রতিটি ফেরাই অনেকটা অপচয় বা দলের পরিকল্পনার সঙ্গে অসামঞ্জস্য বলে মনে হয়েছে।

গত বছর চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলাই ছিল তার সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে তিনি ওয়ানডে দলে সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু জায়গা পাকা করতে পারেননি। ২০২২ সালে ভারতের বাংলাদেশ সফরের পর বাদ পড়েন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে একটি অপ্রাসঙ্গিক ম্যাচে ফেরেন, তারপর আবার হারিয়ে যান দৃশ্যপট থেকে।

তার টেস্ট ক্যারিয়ার আরও খণ্ডিত। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার শেষ চার ইনিংসে রান ছিল যথাক্রমে ৯, ০, ২৩ এবং ৪—যা তাকে দলে ফেরার পক্ষে শক্ত কোনো ভিত্তি দেয়নি। তাহলে এখন কেন তাকে আবার নেওয়া হলো?

এ বছরের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেই রয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর। বিজয় প্রায় ৯০০ রান করেছেন, করেছেন টানা সেঞ্চুরি, যা আবারও নির্বাচকদের নজর কেড়েছে। মূলত বাংলাদেশের ওপেনিং সংকট চলমান থাকায় সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে তাকে, আর বিজয় সেই দরজা দিয়েই আবার প্রবেশ করলেন।

গত বছর এ দলের হয়ে পাকিস্তান সফরেও ছিলেন বিজয়, যখন জাতীয় দলের সিনিয়ররা সাফল্য পেলেন টেস্টে। নির্বাচকদের ভাষ্য অনুযায়ী, সম্ভাব্য ব্যাকআপ খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করতেই এই সিদ্ধান্ত ছিল। দ্য ডেইলি স্টার-কে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বললেন, 'জাতীয় দলের প্রক্রিয়ার মধ্যেই ছিলেন বিজয়।'

গত জাতীয় লিগে বিজয় করেছিলেন ৭০০ রান, যার মধ্যে ছিল ছয়টি অর্ধশতক ও একটি শতক, গড় ছিল ৫০-এর ওপরে। নির্বাচকরা এটিকে ৩২ বছর বয়সী ওপেনারের জন্য 'নতুন শুরু' হিসেবে দেখছেন, 'এটা অনেকটা শেষ জানালার মতো—এই সুযোগটা যদি কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে সেই জানালা আরও বড় হয়ে যেতে পারে। আমরা তিন, চার ও পাঁচ নম্বর ব্যাটসম্যানকেও সুরক্ষিত রাখতে চাই, আর বিজয়ের বল নির্বাচন ও ডেলিভারি ছাড়ার দক্ষতা আছে।'

বিজয়কে জাতীয় দলে নেওয়া ও বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তগুলো অনেকটা তাৎক্ষণিক, কখনও কখনও আবেগনির্ভর বলেই মনে হয়েছে। আগে লাল বলের ঘরোয়া পারফরম্যান্স তাকে সাদা বলের দলে ডাক এনে দিয়েছে; এখন সাদা বলের ফর্ম তাকে টেস্ট দলে ফেরাল।

'বিজয় জাতীয় লিগে খারাপ করেননি, তবে মানসিক দৃঢ়তায় আমাদের যে ঘাটতি, সেখানে তিনি ভালো অবস্থানে আছেন—যদিও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আলাদা ফরম্যাট। আমরা মনে করেছি, সাদা বল হোক বা লাল বল—যে ব্যাটসম্যান ক্রিজে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাচ্ছেন, সেই সবচেয়ে যোগ্য,' বলেন লিপু।

মনে হচ্ছে, নির্বাচকরা 'বিজয় কার্ড'টি ধরে রেখেছেন একটি সহজাত বিকল্প হিসেবে—এমন একটি পদক্ষেপ যেখানে বিশ্বাসের চেয়ে বেশি প্রয়োজন, যেখানে তার প্রতি ধৈর্য খুব একটা দেখা যায়নি।

'এটা ঠিক, যখন ছোট ছোট সুযোগ পেয়েছেন, তখন তিনি জাতীয় দলে নিজেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি। তবে আমরা সেরার আশাই করছি,' বলেন লিপু।

যদিও এই প্রত্যাবর্তন অনেকের কাছে এককালীন সিদ্ধান্ত বলে মনে হতে পারে, কানাঘুষা আছে যে, বিজয়কে আসন্ন এ দলের সফরেও রাখা হতে পারে—যা ইঙ্গিত দেয় যে নির্বাচকরা এই অধ্যায়কে আরও কিছু অধ্যায় দিতে প্রস্তুত।

Comments

The Daily Star  | English

Protesters set Nepal parliament on fire

Hundreds have breached the parliament area and torched the main building, a spokesman for the Parliament Secretariat says

56m ago