‘মুশফিক কোনো কিছুই ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেয় না’
২০০৫ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের। তখন টাইগারদের প্রধান কোচ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভ হোয়াটমোর। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০তম টেস্ট খেলার (আগামীকাল বুধবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে) অনন্য ও গৌরবময় অর্জনের দ্বারপ্রান্তে থাকা মুশফিককের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সামসুল আরেফীন খানের সঙ্গে।
সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য:
দ্য ডেইলি স্টার (ডিএস): বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন মুশফিক। আপনি কোচ থাকাকালীন তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসেন। তখনকার মুশফিক কেমন ছিলেন? পাশাপাশি এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর মুশফিকের ক্যারিয়ারকে এখন আপনি কীভাবে দেখেন?
ডেভ হোয়াটমোর (হোয়াটমোর): এটা একটা চমৎকার অর্জন। যারাই ১০০তম টেস্ট খেলেছে, তারা সবাই একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকে পৌঁছেছে। খুব বেশি দিন হয়নি বাংলাদেশ আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ হয়েছে। আর এই সপ্তাহের শেষদিকে মুশফিক একশতে পৌঁছাচ্ছে। এটা দারুণ ব্যাপার। আমি তার জন্য খুব খুশি। সে এটা করতে পারছে জেনে খুব সন্তুষ্ট। আমি ওকে অভিনন্দন জানাই।
যখন আপনি দেশের হয়ে অনেক ম্যাচ খেলেন, তখন অবশ্যই আপনার মধ্যে প্রতিভা আছে। ওর খুব অল্প বয়সেই আমরা সেটা টের পেয়েছিলাম। সে ছিল খুবই, খুবই তরুণ। আমরা একটা ঝুঁকি নিয়েছিলাম এবং লর্ডসে (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে) তাকে অভিষেক করিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা সে অর্জন করে নিয়েছিল। এর আগে একটা প্রস্তুতি ম্যাচে সে সেঞ্চুরি করেছিল এবং দেখিয়েছিল, ফর্মে আছে। নিঃসন্দেহে, যোগ্যতা দিয়েই সে দলে ঢুকেছিল, অন্য কোনো কারণে নয়।
ডিএস: ক্যারিয়ারের শুরুতে তার অনেক উত্থানপতন ছিল, পারফরম্যান্সের কারণে বাদও পড়েছিলেন। সেসব পেরিয়ে ২০ বছর ধরে দেশের জার্সিতে খেলে যাওয়া, ব্যাটিং লাইনআপের ভরসা হওয়া— তার এই উন্নতি কীভাবে হলো?
হোয়াটমোর: সে ধৈর্য ধরে লড়ে গেছে, তাই না? সে প্রচুর ধৈর্যশীল। তার ব্যাটিংয়েও সেটা দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ব্যাট করতে পারে। (বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক-ব্যাটার) খালেদ মাসুদ পাইলটও ভালো খেলোয়াড় ছিল, কিন্তু মুশফিককে সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল এবং সে সেটা খুব ভালোমতো করেছে।
যখন বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন আনার সময় এসেছিল, তখন পাইলটের জায়গায় মুশফিকই ছিল সঠিক ব্যক্তি। সে প্রমাণ করেছে যে, উইকেটকিপিং ও ব্যাটিং একসঙ্গে সামলেও খেলার উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব। আবারও বলছি, এটা দারুণ একটা ব্যাপার। এমন অর্জন কোনো সহজ ব্যাপার নয়, শারীরিক ও মানসিকভাবে খুবই কঠিন। আর সে দেখিয়েছে, দুই ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করতে পারে।
ডিএস: মুশফিকের কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার কথা সবারই জানা। তবে মাঠে পারফর্ম করার পাশাপাশি মাঠের বাইরেও খেলোয়াড়দের নিজেদের ধরে রাখতে হয়। এই জায়গায় অন্যদের থেকে তাকে কোথায় আলাদা মনে হয়?
হোয়াটমোর: আপনি যা বলছেন, তা সবারই জানা। তার প্রস্তুতি অসাধারণ। সে কোনো কিছুই ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেয় না। তার ফিটনেস অসাধারণের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। যদিও তার কিছু চোট-আঘাত ছিল। ও সেসব কাটিয়ে উঠেছে এবং এখনও উঁচু মানের ফিটনেস ধরে রেখেছে। দৃঢ়সংকল্প ও অন্যান্য যেসব গুণের কথা আপনি বললেন, সেগুলোর পাশাপাশি তার আছে চমৎকার টেকনিক, প্রতিভা ও খুব শক্ত মানসিকতা।
ডিএস: আপনি কি মনে করেন, গত ২০ বছরে বাংলাদেশ দলের জন্য তিনি যে অবদান রেখেছেন, সেটা তার ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানে পুরোপুরি ফুটে ওঠে না?
হোয়াটমোর: আমি তার পরিসংখ্যান সঠিক জানি না। তবে এটা জানি যে, ও বাংলাদেশের জন্য অমূল্য। তাই সংখ্যার কথা ভুলে যান। আমরা সবাই দেখেছি, কতবার সে দেশকে ম্যাচ জিতিয়েছে। তার স্লগ সুইপ ক্রিকেট কিংবদন্তির অংশ, সেরাদের মধ্যে একটা। তার ব্যাকফুটে খেলা এবং অফ সাইডে সজোরে ড্রাইভ করার সামর্থ্য— সবই অসাধারণ। আমি মনে করি, এটুকুই যথেষ্ট। সত্যি বলতে, ওর সম্পর্কে যত বলা হয়, তার চেয়ে বেশি ওর প্রাপ্য।
ডিএস: এই স্মরণীয় মুহূর্তের আগে তাকে কোনো বার্তা দিতে চান?
হোয়াটমোর: মুশফিককে অভিনন্দন।


Comments