অর্থবহ পারফরম্যান্সেই হোক জবাব
২০২৩ বিশ্বকাপ, মুম্বাইতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে নিশ্চিত হারের পরিস্থিতিতে শতক হাঁকিয়ে বুনো উল্লাস করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাকে ঘিরে এর মাস কয়েক আগে থেকে চলা সমালোচনার জবাব যেন উদযাপনে দিতে চাইছিলেন তিনি। বছর দুয়েক আগে ফিরে যাওয়ার কারণ তাওহিদ হৃদয়।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টতে নিশ্চিত হারের পথে থাকা অবস্থায় তিনি যখন ফিফটি স্পর্শ করেন, ডাগআউটে থাকা সতীর্থদের দু'হাত উপরে উঁচিয়ে তালি দেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ার মতন। হৃদয়ও রান খরায় ছিলেন বটে, তাকে ঘিরেও সমালোচনার স্রোত গত কয়েকদিনে ধেয়ে আসছিল নানান দিক থেকে। হৃদয় নিজে অবশ্য উদযাপনে ছিলেন সংযত। যদিও ম্যাচ শেষে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে সংবাদ সম্মেলনে আসার পর তার শরীরী ভাষা, কথা বলার স্বরে পুষে রাখা অহঙ্কার আড়াল হচ্ছিলো না। এমনকি কোন কোন বাক্যে সমালোচকদের খোঁচা দিতেও দ্বিধা করলেন না। অনেক সময় কথা বলার স্বরে বাক্যের অর্থ নির্ধারিত হয়, এটা কে না বুঝে!
ওয়ানডেতেও হৃদয়ের ক্যারিয়ার সেরা এবং একমাত্র সেঞ্চুরির ইনিংসটা প্রায় একইরকম পরিস্থিতিতে। পার্থক্য কেবল তখন রান তাড়ায় নয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে ৩৫ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর হৃদয় জাকের আলির সঙ্গে জুটিতে বাংলাদেশকে নিয়ে যান ভদ্রস্থ পুঁজিতে, ১১৮ বলে ১০০ রান করে ২২৮ রানে নিয়ে যান সংগ্রহ। জুতসই উইকেটে এই রানে লড়াই করা কঠিন ছিলো, লড়াই জমেনি। প্রথম সেঞ্চুরিতে হৃদয়ের উদযাপন ছিলো দেখার মতন। হৃদয় অবশ্য দাবি করতে পারেন, বাকিদের ব্যর্থতায় তিনি আর কী করতে পারেন, তার কাজটা তো তিনি করেছেনই। হয়ত পরিসংখ্যানে ভুল নেই কোনো।
তবে দল শক্ত পরিস্থিতিতে না যাওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত উদযাপন আজকাল মানুষকে কতটা দোলা দেয় এটা প্রশ্ন-সাপেক্ষ। এক সময় বাংলাদেশ দলের সাফল্য আবর্তিত হতো ব্যক্তিগত অর্জনে। দলীয়ভাবে বড় কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকা পড়ত ইন্ডিভিজ্যুয়াল ব্রিলিয়ান্সের মাঝে। সম্মানজনক হার, লড়াই করে হার এখন আর আবেদন তৈরি করে না। দলের বিবর্ণ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত অর্জন ক্ষতে দিতে পারে না কোনো প্রলেপ।
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মাঝেমধ্যে বলেন বটে, 'দল না জিতলে আমি কত রান করলাম তা কোন কাজে আসে না।' কিন্তু অন্তরে সেটা তারা কতটা ধারণ করেন? রান তাড়ায় যদি আস্কিং রেট ১৩, ১৪ হয়ে যায় তাহলেও আপনাকে সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিরাপদে থেকে, ঝুঁকি না নিয়ে ৮, ৯ রান রেটে রান বাড়ালে হারের ব্যবধান কমবে, ব্যক্তিগত অর্জনও দেখা দিবে। কিন্তু দলের লাভ কি? ৮০ রানে হার যেমন হার, ৩০ রানে হারলেও সেটা পরাজয়ই।
সংখ্যা যতই সুন্দর দেখাক, ফলাফলকে তা আড়াল করতে পারে না। আর বাংলাদেশের ফল বদলাবে কেবল তখনই, যখন বদলাবে তাদের মানসিকতা।


Comments