সেই পোস্টের পেছনের গল্প শোনালেন সানজিদা

Sanjida akter
ছাদখোলা বাসে ট্রফি নিয়ে সানজিদা আক্তার ও কৃষ্ণা রানী সরকার।

'ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনী কে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই.' নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগে হৃদয়স্পর্শি স্ট্যাটাস দিয়ে সবার নজর কেড়েছিলেন সানজিদা আক্তার। তারা শেষ পর্যন্ত কথা রেখে ইতিহাস গড়ে পেয়েছেন বিজয়। বাংলাদেশ দলের এই রাইট উইঙ্গার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাতকারে শুনিয়েছেন তার সেই পোস্টের পেছনের গল্প।

যখন স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন আপনার মনের ভেতর কি ছিল? কোন চিন্তা থেকে এই স্টাটাস দিয়েছিলেন দিয়েছিলেন?

সানজিদা আক্তার: আমি এখানে ক্যাম্পে অনেক ধরে আছি জানেনই তো। আমার যে সতীর্থগুলো আছে। তাছাড়া আমার আশেপাশে যা কিছু ঘটছে  সবকিছু মিলে ভেতর থেকে কথাগুলো আসছে। মনের কথাগুলো সব সময় প্রকাশ করা যায় না। সেগুলো ফেসবুকে প্রকাশ করেছি। এটা যে এত দ্রুত এভাবে ছড়িয়ে যাবে ভাবিনি। 

গুরুত্বপূর্ণ কথা ওইগুলোই যা আমার চারপাশে ঘটেছে। এটাই আমি প্রকাশ করেছি। 

সমাজের টিপ্পনী…

সানজিদা: সেটা আমি পার করে এসেছি। 

এই টিপ্পনীগুলো কি? আপনি কি ফেইস করেছেন?

সানজিদা: আসলে বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ, তো আমি শুধু না। আমার সতীর্থ যারা আছে সবাই এসব মোকাবেলা করে এসেছে। এখানে যারা থাকে কেউ কিন্তু আমরা শহরের না। আমরা গ্রামে থেকে এসেছি। গ্রামে হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলা এটা সবার চোখে লাগছে, মাঝে মাঝে কথা বলছে। আমাদের পরিবারকে অনেক কথা শুনিয়েছে লোকজন।

কথাগুলো যারা বলেছে সেও বুঝতে পারেনি হয়ত যে একজনকে এভাবে কথা শুনালে সে কতটা কষ্ট পাবে। হয়তবা বলে ফেলেছে। কিন্তু এইগুলা  বলা ঠিক হয়নি। 

তারা আসলে কি বলত। যেগুলো প্রকাশ্যে বলা যায় বলেন,  যা বলা যায় না তা বলার দরকার নেই

সানজিদা: এই যে আমার বাবা মা ধরে বলত, "অমুকের মেয়ে হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলছে। আমরা গ্রামে থাকি, মান সম্মান শেষ। ওরে তো বিয়ে সাদি দিতে হবে।" শুনাত। "যে বিয়ে সাদি কীভাবে দিবে?"

এখনো এসব শুনতে পান?

সানজিদা: না এখন তো হচ্ছে আমার এলাকায় (কলসিন্দুর) যে সমস্ত আমরা কাজ করে দিয়েছি। আমাদের স্কুল সরকারী করণ হয়েছে। ৮০০ পরিবারের বৃত্তির ব্যবস্থা হয়েছে প্রথম আলোর যে (অনুষ্ঠান) হয়েছিল ওখান থেকে। আমাদের এলাকায় আমরা অনেক উন্নতি করছি খেলার মাধ্যমে। এখন আর কেউ এরকম কথাবার্তা বলে না। কিন্তু আগে তো বলত। 

লিখেছেন আপনাকে যারা সবুজ ঘাস ছুঁতে সাহায্য করেছে তাদের কৃতজ্ঞতা, কারা সেই সাহায্য করেছে 

সানজিদা: যাদের হাত ধরে মাঠে নামা। তারা হচ্ছে মফিজ স্যার, মিনতি রানি ম্যাডাম, রাজীব দাদা এ বং জুয়েল ভাই। এদের হাত ধরে আমি মাঠে আসি। যখন আমার পরিবার আমাকে দেয়নি (খেলতে)। মফিজ স্যার আর মিনতি ম্যাডাম বলেছে যে, 'সমস্যা নেই। আমরা সব দায়িত্ব নিলাম।' এসব বলে খেলতে নিয়ে এসেছে আরকি। আমাদের এলাকার মানুষজনও আমাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করেছে। দূরে খেলতে গিয়েছি স্কুলের সময়। তখন এলাকাবাসী অনেকে দিয়েছে। 

মাঠে নামা আমার শুরু হচ্ছে মফিজ স্যার আর নমিতা ম্যাডাম। জেলা পর্যায়ে মকবুল স্যার, বোরহান উদ্দিন স্যার, সালাউদ্দিন স্যার, সুলতান স্যার এরা ছিলেন। এরাও আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। আমি সবাইকেই মিন করে বলেছি। 

লিখেছেন জয় পেলে আরও মেয়েদের পথ প্রশস্থ হবে। এখন তো জিতলে। আসলেই কি পথ প্রশস্ত হলো?

সানজিদা:   ফেসবুক পোস্টে আমি কিছু কিছু কমেন্ট দেখেছি যে অনেকে বলেছে আমি দিতে চাই কিন্তু বুঝতে পারছি না কীভাবে দিব। একটু যদি বলতেন। ইতোমধ্যে অনেক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। আগের মতো আর বাধা থাকবে বলে মনে হয় না। 

আপনাদের পরের যারা যেমন অনূর্ধ্ব-১৫ দল। তারা ঠিকপথে আছে?

সানজিদা: আমরা সবাই একসঙ্গে অনুশীলন করি। আমরা সিনিয়ররা যদি ৯টায় করি। তারা করে ১২টায়। ওরা অনেক কঠোর পরিশ্রম করছে। ভালো কিছু করবে বলে আশা করি।

ছাদখোলা বাসে ৪ ঘণ্টা আসার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

সানজিদা: আমি সবার আগে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী স্যারকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা দিব। কারণ আমার ছোট কথায় এত বড় আয়োজন হবে আমি কখনো কল্পনাও করিনি। হাজার হাজার দর্শক আমাদের গাড়ির পাশ দিয়ে এসেছে। আমরা বাসে দাঁড়িয়ে এসেছি, বাকি মানুষ পায়ে হেঁটে আমাদের সঙ্গে এসেছে। 

ইউরোপিয়ান লিগগুলোতে দেখতাম ট্রফি নিয়ে ফিরলে এরকম ছাদখোলা বাসে যায়। আমারও মনে হয়েছিল এভাবে আমরাও যদি দেশবাসীকে  উপহার দেই। সেই থেকে বলা। বাংলাদেশে প্রথম একটা ইতিহাস হলো। অনেক ভালো লেগেছে। অনেক খুশি হয়েছি।

এত মানুষ ছিল যে বাসই সামনে এগুতে পারছিল না

সানজিদা: শুধু আমি কেন, আমাদের সঙ্গে যারা ছিল তারাও কল্পনা করতে পারেনি যে এত লোক আমাদের ভালোবাসে। আমরা এতদিন জানতাম ক্রিকেটই বেশি ভালোবাসে। এখন দেখলাম ফুটবলেও হলো। নিজ চোখে দেশে বিশ্বাস করতে পারছিলাম যে ফুটবলের এত জনপ্রিয়তা। 

যাওয়ার আগে ফাইনালের কথাও বলে যান নাই। কোন পর্যায়ে বিশ্বাস করা শুরু করলেন যে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন?

সানজিদা: আসলে আমাদের মনের কথা কাউকে বলি নাই। বললে হয়ত কেউ বিশ্বাস করবে না। আমরা চেয়েছি আগে করে দেখাব। আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল ফাইনাল খেলব। সেটা আপনাদের প্রকাশ করিনি। আমাদের বিশ্বাস ছিল, স্যারেরাও বলেছে ফাইনাল খেলব। আমরা নিজেদেরকে দেওয়া কথা রাখতে পেরেছি। 

প্রথম ম্যাচ জেতার পর বিশ্বাস বাড়ল? 

সানজিদা: এখানে (দেশে) আমরা যখন মালয়েশিয়ার সঙ্গে খেললাম। তারা অনেক ভালো দল। তাদেরকে হারিয়েছি আমরা। তখন আত্মবিশ্বাস ছিল যে ভাল কিছু করতে পারব। তারপর সাফে গিয়ে মালদ্বীপ, পাকিস্তানকে সহজেই হারালাম। সবচেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাস বেড়েছে ভারতের বিপক্ষে। ভারতকে হারানোর পর একটা শক্তি পেয়েছি ভেতরে। কারণ সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল তারা। 

Sanjida Akter and Krishna Rani Sarkar

ফাইনালে কখন মনে হয়েছে জিততে পারবেন?

সানজিদা: ফাইনালে নামার আগে চিন্তা ছিল আমরা আমাদের খেলাটা খেলব। যদি হারিও তাতে অসুবিধা নাই। স্যার আমাদের বলেছে আমরা চাপে থাকব না। ওদের দেশে খেলা, ওরাই চাপে থাকবে। আমাদের শুরুটা খুব ভালো ছিল। আঁখি যে সেন্টার ব্যাক থেকে একটা পাস দিল। তখন থেকে যে আক্রমণ শুরু করেছি, এরপর আক্রমণের উপরই ছিলাম। 

আমি যে রাইট উইং খেলছি, ওদের যে লেফট উইং আছে, আর ওদের লেফট ব্যাক। আমি মাঝখানে ছিলাম। তখন ভাবলাম কীরে এরা আক্রমণ করে খেলবে না? ডিফেন্স এসে পড়েছে! তার মানে ভয় পেয়েছে। আমাদের আরও বেশি বেশি চাপ দিতে হবে। শামসুন্নাহার একটা গোল বসিয়ে দেওয়ার পর মনে হলো আক্রমণ করতে হবে। 
 

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

11m ago