৭ গোলের পাগলাটে রোমাঞ্চে বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙা হার

শেষ বাঁশি বাজতে চোখে-মুখে অবিশ্বাস নিয়ে বসে পড়লেন হামজা চৌধুরী, হতবিহবল দেখাচ্ছিলো শমিত সোমকে। ক্ষণিকের মধ্যে আশা, নিরাশার দোলাচলে বসে হৃদয় ভাঙার আক্ষেপে পুড়ল বাংলাদেশ।
৭৫ মিনিটে ৩-১ গোলে এগিয়ে গিয়েছিলো হংকং, চায়না। ম্যাচে তখন যেন আশা মিইয়ে গেছে বাংলাদেশের। তবে দুর্দান্ত ফুটবলে জেগে উঠা লাল সবুজের প্রতিনিধিরা শেখ মোরসালিন ও শমিত সোমের রোমাঞ্চকর দুই গোলে আনল সমতা। উৎসবের ঢেউ উঠল গ্যালারিতে। তবে সেটাও ধরে রাখা গেল না এক মিনিটও, একদম শেষ মুহুর্তে হ্যাটট্রিক করে বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবালেন রাফায়েল মার্কেজ।
বৃহস্পতিবার এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ হারল ৪-৩ গোলে। এশিয়ান কাপের মূল পর্বে যাওয়ার আশা এখন অনেকটা মিইয়ে গেল।
ম্যাচের ১৩ মিনিটে চোখ ধাঁধানো ফ্রি-কিকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছিলেন হামজা। বিরতির ঠিক আগে এভারটনের গোলে সমতা আনে হংকং। বিরতির পর ৫০ মিনিটে তাদের এগিয়ে নেন রাফায়েল, ৭৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বসেন তিনি। ৮৪ মিনিটে মোরসালিন জটলার মধ্য থেকে ব্যবধান কমানোর পর যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে সমতা এনেছিলেন শমিত, খানিক পর সেই সমতা ভেঙে দেন রাফায়েল।
ম্যাচের ২০ সেকেন্ডেই ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রাকিব। প্রথম কয়েক মিনিট আক্রমণ করে হংকং। ৭ মিনিটে জুনিনহোর শট বার ঘেঁষে বাইরে যায়। নবম মিনিট থেকে গা ঝাড়া দেয় স্বাগতিকরা। ১৩ মিনিটে আসে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত এক গোলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন হামজা চৌধুরী। পরের মিনিটেই সুযোগ পেয়েছিল হংকং। জুনিনহোর শট কোনরকমে ঠেকান মিতুল মারমা। ১৮ মিনিটে বাম প্রান্তে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে হংকংয়ের এভারটনের নেওয়া ফ্রি-কিক অল্পের জন্য বাইরে যায়।
এরপর দুই দল বেশ কিছু আক্রমণ করলেও গোলের তেমন নিশ্চিত সুযোগ আসেনি। ৩৯ মিনিটে এভারটনের শট বার ঘেঁষে বাইরে গেলে ম্যাচে ফিরতে পারেনি সফরকারীরা। এভারটন বিপদের কারণ হন একদম বিরতির ঠিক আগে। জটলার মধ্যে বল পেয়ে জালে জড়িয়ে দেন তিনি।

বিরতির পর পরই গোল হজম করে বাংলাদেশ। সোহেল রানা জুনিয়রের ভুল পাস থেকে রাফায়েল পেয়ে যান উপহার। বক্সে ঢুকে বল জালে জড়াতে কোন ভুল করেননি তিনি। ৫০ মিনিটে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় সফরকারী দল।
তিন মিনিট পর আরেক গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলো হংকং। লম্বা থ্রোয়িং থেকে বল পেয়ে এভারটনের নেওয়া হেড বারে লেগে বাইরে চলে যায়।
পিছিয়ে পড়া একাদশে তিনটি বদল আনেন কাবরেরা। দুই সোহেল রানা ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের বদলে মাঠে নামেন শমিত সোম, জামাল ভুঁইয়া ও ফাহমিদুল। তারা নামায় ধার বাড়ে আক্রমণের। তবে হংকংও বারবার আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল স্বাগতিক রক্ষণে।
৭৫ মিনিটে চরম হতাশার মুহূর্ত। এভারটনের রক্ষণচেরা পাসে নিজের মার্কারকে ফাঁকি দিয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়ান মার্কেজ।
হার তখন সম্ভাব্য ফল। তবে হাল না ছেড়ে হুট করে জেগে উঠে গোটা দল। ৮৪ মিনিটে আবার ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। জামালের ফ্রি-কিক থেকে ফাহমিদুলের চিপ হংকং গোলরক্ষক ধরতে গড়বড় করে বসেন। তার ভুল থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে জালে জড়ান শেখ মোরসালিন।
শেষ সময়গুলো দারুণ চাপ বাড়ায় বাংলাদেশ, একের পর এক আক্রমণ থেকে তৈরি করতে থাকে সুযোগ। ম্যাচ শেষের মিনিট খানিক আগে মোরসালিনের কর্নার থেকে শমিতের দারুণ হেডে সমতায় ফেরে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে নাটকের বাকি ছিলো আরও, পরের মিনিটেই ডিফেন্সের ভুলে রাফায়েল হ্যাটট্রিক করে বসেন। উৎসবের মঞ্চ ভরে উঠে বিষাদের রঙে।
এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের 'সি' গ্রুপের টেবিলে এখন শীর্ষে হংকং। ৩ ম্যাচে ২ জয়ে ৭ পয়েন্ট তাদের। ৩ ম্যাচে ১ জয়, ২ ড্রতে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিঙ্গাপুর। ভারত ৩ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে। ৩ ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে বাংলাদেশ।
Comments