জন রবার্টসন: ফুটবলের ‘পিকাসো’ ও একজন মহাতারকার বিদায়
স্কটল্যান্ডের সাবেক উইঙ্গার জন রবার্টসন ৭২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নটিংহ্যাম ফরেস্ট এই শোক সংবাদটি নিশ্চিত করেছে। ক্লাবটির তৎকালীন কিংবদন্তি কোচ ব্রায়ান ক্লাফ রবার্টসনকে কখনো বলতেন 'আমাদের খেলার পিকাসো', আবার কখনো আদর করে ডাকতেন 'আমাদের সেই খাটো-মোটা ছেলেটি'।
ফরেস্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, 'আমরা ক্লাবের কিংবদন্তি ও প্রিয় বন্ধু জন রবার্টসনের প্রয়াণে অত্যন্ত শোকাহত। আমাদের ক্লাবের একজন সত্যিকারের মহানায়ক ও দুইবারের ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমান উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) বিজয়ী জনের অতুলনীয় প্রতিভা, নম্রতা ও নটিংহ্যাম ফরেস্টের প্রতি তার অটল ভক্তি কখনোই ভোলা যাবে না।'
১৯৫৩ সালের ২০ জানুয়ারি স্কটল্যান্ডের ল্যানার্কশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন রবার্টসন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ফরেস্টে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালের শুরুতে ক্লাফ কোচের দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত মিডফিল্ডে খুব একটা নিয়মিত ছিলেন না রবার্টসন।
রবার্টসনকে প্রথমবার দেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নিজের আত্মজীবনীতে ক্লাফ লিখেছিলেন, 'পেশাদার অ্যাথলেট হিসেবে তার মতো বেমানান চেহারার কাউকে খুব কমই দেখা গেছে। দেখতে অগোছালো, আনফিট ও লক্ষ্যহীন— তাকে নিয়ে সময় নষ্ট করাটাই যেন ছিল বৃথা।' কিন্তু ক্লাফ এটাও লিখেছিলেন, 'আমার ভেতরের কিছু একটা বলছিল যে, তাকে নিয়ে ধৈর্য ধরা সার্থক হবে।'
ক্লাফ রবার্টসনকে বাম উইংয়ে খেলার সুযোগ করে দেন এবং সেখানেই তার প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে। ১৯৭৭ সালে ফরেস্ট ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ স্তরে (বর্তমান প্রিমিয়ার লিগ) জায়গা করে নেয়। সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে একদমই সময় লাগেনি ক্লাবটির। তারা ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে লিগ শিরোপা জেতে এবং টানা দুইবার (১৯৭৮-৭৯ ও ১৯৭৯-৮০) ইউরোপীয় কাপ জয়ের স্বাদ পায়।
রবার্টসন সম্পর্কে ক্লাফের পরবর্তী মূল্যায়ন ছিল এমন, 'সে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা বল যোগানদাতা হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছিল, ঠিক যেমনটা ব্রাজিলিয়ান বা ইতালিয়ানদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। তাকে বল আর এক গজ ফাঁকা জায়গা দিন, সে একজন শিল্পীতে পরিণত হবে— সে ছিল আমাদের খেলার পিকাসো।'
ফরেস্ট তাদের দুটি ইউরোপিয়ান ফাইনালই জিতেছিল ১-০ ব্যবধানে। আর দুটিতেই রবার্টসন ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। ১৯৭৯ সালে মিউনিখে মালমোর বিপক্ষে হেডে ট্রেভর ফ্রান্সিসের করা জয়সূচক গোলের কারিগর ছিলেন তিনি।
পরের বছর মাদ্রিদে ফাইনালের আগে প্রতিপক্ষ হামবুর্গের জার্মান রাইট-ব্যাক ম্যানি কাল্টজকে নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল। তখন ক্লাফ বলেছিলেন, 'আমাদের একজন খাটো-মোটা মানুষ আছে যে তাকে ঘোল খাইয়ে ছাড়বে।' সেই ম্যাচে রবার্টসনই একমাত্র গোলটি করে দলকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন।
পাঁচ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে স্কটল্যান্ডের হয়ে ২৮টি ম্যাচ খেলেন রবার্টসন, যার মধ্যে ১৯৭৮ ও ১৯৮২ বিশ্বকাপও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৮৩ সালে তিনি ডার্বি কাউন্টিতে যোগ দেন এবং পরে আবার ফরেস্টে ফেরেন। বুটজোড়া তুলে রাখার পর যুক্ত হন কোচিং পেশায়। সাবেক ফরেস্ট সতীর্থ মার্টিন ও'নিলের অধীনে তিনি লেস্টার সিটি, সেল্টিক ও অ্যাস্টন ভিলার মতো ক্লাবে কাজ করেন।


Comments