ফিরে দেখা ২০২৫: নজর কেড়েছে বাংলাদেশ হকি

যে দেশে ক্রিকেট আর ফুটবল সংবাদপত্রের সবটুকু জায়গা দখল করে থাকে, সেখানে ২০২৫ সালে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নিয়েছে হকি। প্রচারের আলোয় কম আসা খেলাগুলো যখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখন মাঠের পারফরম্যান্স ও সুসংগঠিত পরিকল্পনায় সবার নজর কেড়েছে বাংলাদেশ হকি। ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরেও যে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশাল সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে, বছরজুড়ে হকি ছিল তারই এক শক্তিশালী উদাহরণ।

২০২৪ সালের ক্ষমতার পালাবদলের পরবর্তী অস্থিতিশীলতায় প্রায় প্রতিটি ক্রীড়া ফেডারেশনই স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ৪২টি ফেডারেশনে অ্যাড-হক কমিটি গঠনের মাধ্যমে স্থবিরতা কাটে। বাহরাইনে যুব এশিয়ান গেমস, তুরস্কে ইসলামিক সলিডারিটি গেমস এবং পাকিস্তানে দক্ষিণ এশীয় গেমসের লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয় জোরদার প্রস্তুতি।

২৩টি ডিসিপ্লিনে পাঁচ শতাধিক অ্যাথলেটকে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়, যাদের অনেকের কোচ ছিলেন বিদেশি। এর সুফলও মেলে হাতেনাতে; যুব এশিয়ান গেমস ও ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে পদক জেতে বাংলাদেশ। তবে সব অর্জনকে ছাপিয়ে গেছে হকির সাফল্য।

হকির রাজকীয় উত্থান

২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো এফআইএইচ হকি পুরুষ জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছিল। আর ২০২৫ সালে অনূর্ধ্ব-২১ দলের পারফরম্যান্স দীর্ঘদিনের কাঠামোহীন হকিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে।

ডাচ কোচ সিগফ্রাইড আইকম্যানের অধীনে ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে লড়াকু অভিষেক ঘটায় যুবারা। ২৪ দলের মধ্যে ১৭তম হয়ে তারা ঘরে তোলে নতুন প্রবর্তিত 'চ্যালেঞ্জার ট্রফি'। সাবেক চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও দুইবারের রানার্সআপ ফ্রান্সের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়াই করা বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট শেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, অস্ট্রিয়া ও মিশরের মতো দেশের উপরে থেকে।

এই সাফল্যের নায়ক ছিলেন ড্র্যাগ-ফ্লিকার আমিরুল ইসলাম। টুর্নামেন্টে ১৭ গোল করে শীর্ষ গোলদাতা হন তিনি। তার সঙ্গী রকিবুল হাসান, দ্বীন ইসলাম, ওবায়দুল জয় ও মেহরাব হোসেনদের দলীয় সংহতি অবাক করেছে অভিজ্ঞ বিশ্লেষকদেরও।

সাফল্য কেবল মাঠেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দুই বাংলাদেশি আম্পায়ার সেলিম লাকি ও শাহবাজ আলী প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে ইতিহাস গড়েন। তারা মোট ২৮টি ম্যাচে মাঠের আম্পায়ার, ভিডিও আম্পায়ার ও রিজার্ভ আম্পায়ারের ভূমিকা পালন করেন।

তবে এই আনন্দের মাঝে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন কোচ আইকম্যান। তিনি সাফ জানিয়েছেন, দ্রুত স্পন্সর ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে এই ছন্দ হারিয়ে যাবে। হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) রিয়াজুল হাসানও স্বীকার করেছেন, আর্থিক সংকটই এখন তাদের বড় বাধা।

তীরন্দাজদের লক্ষ্যভেদ

হকির পাশাপাশি আর্চারিতেও এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। রোমান সানা বা দিয়া সিদ্দিকীর মতো প্রতিষ্ঠিত তারকারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেও হাল ধরেছেন তরুণরা। এশিয়া কাপ স্টেজ-২-এ আবদুর রহমান আলিফ রিকার্ভ এককে সোনা জেতেন। এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে কুলসুম আক্তার মণি জেতেন ব্রোঞ্জ।

মাঠের বাইরে সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ চপলের এশিয়ান আর্চারি ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া। টমাস হানকে ২৯-৯ ভোটে হারিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এশিয়ান আর্চারির শীর্ষ পদে বসেন তিনি।

অন্যান্য খেলার সাফল্য

নারী কাবাডি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও ঢাকা বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জ জিতেছে। টেনিসে জারিফ আবরার প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আইটিএফ ওয়ার্ল্ড টেনিস ট্যুর জুনিয়র্স (J-30) একক শিরোপা জিতেছেন। দাবা, জিমন্যাস্টিকস, ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিসেও এসেছে আন্তর্জাতিক পদক।

২০২৫ সাল একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে—ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরে তথাকথিত 'ছোট' খেলাগুলোতে সামান্য সুযোগ ও প্রশিক্ষণ দিলে অ্যাথলেটরা তার প্রতিদান দিতে পারেন। ২০২৬ সালে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই এখন সংশ্লিষ্টদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

10h ago