বরাবরের মতো বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শুরু বিপিএল

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টির ১২তম সংস্করণ আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। ক্রিকেটীয় উত্তেজনার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে আবারও বিতর্কের ঘন কালো ছায়া দেখা দিয়েছে। আয়োজনের ত্রুটি থেকে শুরু করে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোতে অস্থিরতা— সব মিলিয়ে বিশৃঙ্খলা যেন এই লিগের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রথম বল মাঠে গড়ানোর আগেই এক গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এবারের বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে সিলেট টাইটান্স ও রাজশাহী ওয়ারিয়র্স। টুর্নামেন্টটি মসৃণভাবে পরিচালনার বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বেশ আগে থেকেই। কিন্তু খেলা মাঠে গড়ানোর মুহূর্তেও একের পর এক বিতর্ক সামনে আসছে।

আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে নবনির্বাচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মাত্র আড়াই মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছে। তখন থেকেই তারা বিপিএলের সম্প্রচার, নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও লজিস্টিকসহ নানা সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অনেক কাজ সম্পন্ন হলেও বেশ কিছু জায়গায় এখনও অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে।

আগামী পাঁচ মৌসুমের জন্য ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া, দীর্ঘ ১২ বছর পর আবারও খেলোয়াড়দের নিলাম প্রক্রিয়া ফিরে এসেছে। তবে নিলামের আগেই বিতর্ক দানা বাঁধে। গত আসরে ফিক্সিংয়ের অভিযোগে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া হয়।

এই মৌসুমে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর পেমেন্টের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয় বিসিবি। অংশগ্রহণ ফি ও ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার ওপর তারা জোর দেয়। আগের আসরগুলোতে এসব নিয়ম খুব একটা মানা হতো না। মূলত অতীতের বকেয়া নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা এড়াতেই এবার এই কড়াকড়ি। তাতেও সত্যিকার অর্থে লাভ হয়নি। এছাড়া, আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। টুর্নামেন্টটি নির্বিঘ্নে শেষ হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

সবশেষ বিতর্কটি সামনে এসেছে টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগের অর্থাৎ গতকাল রাতে। চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ট্রায়াঙ্গেল সার্ভিসেস লিমিটেড আর্থিক সমস্যার কথা জানিয়ে সরে দাঁড়ায়। এরপর বিসিবি নিজেই দলটির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ সুবিধা ও সরঞ্জামের অভাবে নোয়াখালী এক্সপ্রেসের কোচিং স্টাফরা কিছুক্ষণের জন্য অনুশীলন বয়কট করেন।

নোয়াখালীর সমস্যাটি অবশ্য দ্রুত সমাধান করা হয়েছে। দলটির প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ এটিকে 'মুহূর্তের উত্তেজনায় তৈরি হওয়া ভুল বোঝাবুঝি' বলে অভিহিত করেছেন।

তবে চট্টগ্রামের সংকট এড়ানো সম্ভব ছিল। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি ২ কোটি টাকা অংশগ্রহণ ফি জমা দিলেও ১০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি সময়মতো দিতে ব্যর্থ হয়। যদিও গত ৯ ডিসেম্বর বিসিবি ঘোষণা করেছিল যে, চট্টগ্রাম তাদের পাওনা পরিশোধ করেছে। তবে দলটির কার্যক্রম নিয়ে সমস্যা থেকেই যায়। তাদের কোনো বিদেশি খেলোয়াড় বাংলাদেশে আসেননি এবং কোচিং প্যানেলও কয়েক দফা পরিবর্তন করা হয়।

বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইফতেখার রহমান মিঠু জানান, 'চিঠিতে তারা (চট্টগ্রাম) জানিয়েছে যে, নেতিবাচক সংবাদ প্রচারের কারণে তারা স্পন্সর জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছে।'

চট্টগ্রামের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিসিবি সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকে টিম ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। মিজানুর রহমান বাবুল ও নাফিস ইকবালকে যথাক্রমে প্রধান কোচ ও টিম ম্যানেজার করা হয়েছে। তবে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক, কোচিংয়ের ধারাবাহিকতা ও বিদেশি খেলোয়াড়দের পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। মিঠু যদিও আশা প্রকাশ করেছেন যে, দলটির প্রথম ম্যাচের আগে পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দুজন বিদেশি ক্রিকেটার এসে পৌঁছাতে পারেন।

মাঠের বাইরের এতসব অস্থিরতার মধ্যেও খেলোয়াড়রা ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সিলেট টাইটান্সের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, 'আমরা আমাদের দলের ওপর মনোযোগ দিচ্ছি। কারণ এসব বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা করলে দলের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।'

বিপিএলের ১২তম আসর যখন শুরু হতে যাচ্ছে, তখন টুর্নামেন্টটি আবারও সম্ভাবনা ও অনিশ্চয়তার এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। চিরচেনা বিতর্কগুলো সামাল দিয়ে এটি কতটা রোমাঞ্চকর ক্রিকেট উপহার দিতে পারবে, সেটাই এখন দেখার। আর এবারের আসরটি মাঠের খেলার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে নাকি এর সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে থাকা বিশৃঙ্খলার জন্য— তা সময়ই বলে দেবে।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia contribution to Bangladesh democracy

A leader who strengthened our struggle for democracy

Khaleda Zia leaves behind an enduring legacy of service.

13h ago