ফ্লোটিলার সর্বশেষ অবস্থা জানালেন শহিদুল আলম
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) মিডিয়া ফ্লোটিলার জাহাজ কনসায়েন্সে থাকা একমাত্র বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম জাহাজটির সর্বশেষ আপডেট এবং ফ্লোটিলা কবে ফিলিস্তিনে পৌঁছাবে তা জানিয়েছেন।
আজ শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশি এই আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী।
পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:
'আজ সকালবেলা আমরা যখন হিসাব করেছি, তখন আমাদের জাহাজটি গাজা থেকে ৩৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। সে অনুযায়ী আমরা যদি যেতাম তাহলে আমাদের রোববারে গাজায় পৌঁছানোর কথা। কিন্তু আমরা গতি কমিয়েছি। কারণ আমাদের সঙ্গে যে নৌকাগুলো আছে, সেগুলোর গতি আমাদের জাহাজের চেয়ে কম। সেগুলোকে আমরা ছেড়ে আসতে চাইনি।
আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে এবং আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি গতি কমিয়ে তাদের সঙ্গেই যাব। এর কারণে সময় একটু বেশি লাগবে। বাস্তবে এই রাস্তা পৌঁছানোর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ডেঞ্জার জোনে পৌঁছানো। যে জায়গা থেকে ইসরায়েল হামলা শুরু করে। সেটা ২০০ নটিক্যাল মাইলখানেক দূরত্ব।
সেই জায়গায় আমাদের ধরবে কি না, সেটা এখনো আমরা জানি না। এর আগে কী করেছে সেটার ভিত্তিতে একটা ধারণা হতে পারে। এটা আন্তর্জাতিক পানি, এখানে তাদের কোনো এখতিয়ার নেই।
আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি। এটা বহুদিন ধরে করা হচ্ছে। যারা যারা এই জাহাজে আছে, তাদের ট্র্যাক রেকর্ড, ব্যাকগ্রাউন্ড, তারা কী করে—এগুলো জেনে বাছাইকৃত মানুষদেরই নেওয়া হয়েছে। কারণ আমরা নিশ্চিত না যে এখানে কে আসতে পারে, কে ঢুকে পড়তে পারে।
তবে আমাদের খুব ভালো আইনজীবী মহল রয়েছে। প্যালেস্টাইনে রয়েছে, দেশের বাইরেও রয়েছে। সারা পৃথিবীতে খুব বাঘা বাঘা আইনজীবী যারা এই ব্যাপার নিয়ে কাজ করছেন, তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমরা তাদের সকল তথ্য দিচ্ছি। তাদের সাথে কথা বলছি। কিছুক্ষণ আগেও আমরা আরএসএফে সঙ্গে কথা বলছিলাম।
সেখানে সাইবার সিকিউরিটির ব্যাপারগুলো কী, আমাদের যন্ত্রপাতিগুলো কী করতে হবে। যদি ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে, তার আগে আমাদের কী করতে হবে। সেগুলোর অনেকগুলো প্রস্তুতি আমরা নিয়ে নিয়েছি। তবে কী যে হবে সেটা তো কখনই আগে থেকে বলা যায় না। কাজেই একটা অনিশ্চয়তা থেকেই যায়।
আমাদের খাবার নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আমরা যথেষ্ট খাবার সঙ্গে নিয়েছি। আমরা নিশ্চিত করেছি যে, আমাদের কারণে গাজাবাসীর ওপর যেন কোনো চাপ তৈরি না হয়। এমনিতেই তাদের যে অবস্থা। তবে ত্রাণ দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য না। আমরা সেই কারণে যাচ্ছি না। ইসরায়েলের এই বাধাটা যে অবৈধ, সেটাকে প্রশ্ন করার জন্যই যাচ্ছি।
বিশেষ করে এই জাহাজে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই সাংবাদিক এবং স্বাস্থ্যকর্মী। এই দুই দলকে ইসরায়েল খুব পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করে আক্রমণ করেছে, খুন করেছে, করে যাচ্ছে। কাজেই আমরা আমাদের সহযোদ্ধাসহ পেশাজীবীদের সঙ্গে সমর্থন জানিয়ে তাদের পাশে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য যাচ্ছি। আমাদের পেশাজীবী যারা তারা যাতে কাজ করতে পারে সেটাই দেখাতে চাই। সেই কারণে আমরা যা করি গাজায় গিয়ে তাই করব বলে অনুমান করছি। এটা তো পরিষ্কার বলা যায় না।
তবে ইসরায়েল আগে যা করেছে, সে অনুযায়ী যদি হয়, তাহলে আমাদের পৌঁছানোর অনেক আগেই তারা বাধা দেবে। কীভাবে বাধা দেবে, কতটা বাধা দেবে, আর কী করবে সেটা জানা নেই। তবে আমরা যদি ভেদ করতে পারি, যেটা আমাদের উদ্দেশ্য, তাহলে আমরা গাজায় গিয়ে গণমাধ্যমকর্মী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের যা করার, গাজাবাসীর জন্য সেটাই করব। পৃথিবীর কাছে যাতে সঠিক তথ্যটা পৌঁছানো যায়। সেটাই আমরা করব, সেটাই আমাদের কাজ।
এই মুহূর্তে সমুদ্র অতটা উত্তাল না এবং আমরা যে গতিতে যাচ্ছি সামাল দিতে পারছি। কিন্তু এর আগে সমস্যা হয়েছিল। একটা সময় ঝড় বেশ ভালোভাবে আমাদের আক্রান্ত করেছে। সমুদ্রে আসলে সেটা মেনে নিতে হবে। আমাদের চেয়ে ছোট নৌকাগুলোর ভয় অনেক বেশি।
সাধারণভাবে যেটা বলতে চাই যে, এখানে একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা একত্রিত হয়েছি। আমি বাংলাদেশি মানুষদের থেকে প্রচণ্ড সমর্থন পেয়েছি। আবেগময় লেখালেখি, বিভিন্নভাবে তারাও যে সম্পৃক্ত, তারাও যে আমাদের সঙ্গে আছে, এটা জানিয়েছে। কাজেই তাদেরকে আমাদের হয়ে ধন্যবাদ জানাবেন।
যারা সত্যিকার অর্থেই মুক্তিকামী, তারা প্রত্যেকেই এভাবে করছেন। আমাদের দেশে আমরা ৭১-এ লড়াই করেছি, ২৪-এ লড়াই করেছি, কাজেই আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কী করতে হয় সেটা জানি। আমি নিশ্চিত যে, সুযোগ যদি থাকতো বাংলাদেশেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে এখানে আসতো, তারা এখানেও এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতো।'
Comments