কেন ডিপসিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে অনেক দেশ?

ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ কিছু দেশ এই সপ্তাহে তাদের সরকারি কর্মীদের চীনা এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ডিপসিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বেশ কিছু দেশ একইভাবে সরকারি কর্মচারীদের মোবাইল ডিভাইসে ডিপসিক অ্যাপ্লিকেশন নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে। মূলত 'নিরাপত্তা উদ্বেগ'-এর কথা বলে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে।

গত মাসে ডিপসিকের উত্থানের পর এআই যুদ্ধে ওপেনএআইয়ের মতো মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া শুরু হয়। বিশেষ করে ডিপসিক অনেক কম খরচে তাদের মডেল তৈরির দাবি করলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দরপতন হয়।

কিন্তু আলোচনায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই এই চীনা এআই নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে পশ্চিমা মহলে।

যেসব দেশ ডিপসিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, সব সরকারি ডিভাইসে ডিপসিককে ব্লক করতে একটি বিল পেশ করার পরিকল্পনা করছে মার্কিন আইন প্রণেতারা।

৩১ জানুয়ারি মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা তাদের সিস্টেম এবং কর্মচারীদের ডিভাইসে ডিপসিক ব্লক করে দেয়।

এর এক সপ্তাহ আগে মার্কিন নৌবাহিনী প্রথম তাদের সদস্যদের ডিপসিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়।

দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বুধবার জানান, কর্মচারীদের ডিভাইসে ডিপসিক ব্যবহার সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে এআই, বিশেষ করে চ্যাটজিপিটি ও ডিপসিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৩১ জানুয়ারি দেশটির ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা কমিশন জানায়, ব্যবহারকারীর তথ্যের ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা হচ্ছে তা স্পষ্ট করতে ডিপসিককে লিখিতভাবে অনুরোধ জানাবে তারা।

কোরিয়ার হাইড্রো অ্যান্ড নিউক্লিয়ার পাওয়ার অধিদপ্তর গত মাসেই তাদের কর্মচারীদের ডিভাইসে ডিপসিকসহ সব এআই ব্লক করে দেয়।

অস্ট্রেলিয়া

মঙ্গলবার সব সরকারি ডিভাইসে ডিপসিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক জানান, 'অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার্থে' এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

ইতালি

৩০ জানুয়ারি ইতালির তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ডিপসিককে 'ইতালীয় ব্যবহারকারীদের থেকে পাওয়া তথ্য প্রক্রিয়াকরণ সীমিত করার' নির্দেশ দিয়েছে।

এর দুই দিন আগে ব্যবহারকারীদের তথ্য কীভাবে সংরক্ষিত ও পরিচালিত হচ্ছে, ডিপসিকের কাছে তা জানতে চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

তাইওয়ান

সোমবার 'নিরাপত্তা ঝুঁকি'-কে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তাইওয়ানও তাদের সরকারি কার্যালয়গুলোতে ডিপসিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

কেন ডিপসিক নিয়ে উদ্বিগ্ন এসব দেশ?

উপরের সবকটি দেশই চীনা অ্যাপ্লিকেশনটির সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এছাড়া ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য না পাওয়াকেও কারণ হিসেবে দেখিয়েছে।

ডিপসিকের গোপনীয়তা নীতিমালা অনুযায়ী তারা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে নিম্নলিখিত তথ্য সংগ্রহ করে:

ব্যক্তিগত তথ্য: ইমেইল, ফোন নম্বর, পাসওয়ার্ড এবং জন্ম তারিখ, যা অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধনের জন্য ব্যবহার করা হয়।

চ্যাট ইতিহাস: ব্যবহারকারীরা যেসব টেক্সট ও অডিও ইনপুট দেয়, তা সংগ্রহ করে।

প্রযুক্তিগত তথ্য: ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত তথ্য—যেমন আইপি ঠিকানা, টাইপ করার প্যাটার্ন ও অপারেটিং সিস্টেম।

ডিপসিকের ওয়েবসাইটেই বলে দেওয়া হয়েছে, এসব তথ্য সেবা প্রদানকারী ও বিজ্ঞাপন অংশীদারদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে তারা।

চ্যাটজিপিটির গোপনীয়তা নীতিমালায়ও প্রায় একইরকম। নিবন্ধনের সময় দেওয়া ব্যক্তিগত তথ্য, ডিভাইস সম্পর্কিত তথ্য এবং চ্যাটবটে দেওয়া সব ইনপুট যতদিন প্রয়োজন, ততদিন সংরক্ষণ করে তারা। এসব তথ্য সহযোগী সংস্থাগুলোকেও প্রদান করে ওপেনএআই।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, ডিপসিককে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সবকটি দেশই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। এআই-যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের অগ্রগতি থামাতে এসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বুধবার এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিরুট সিকিউরিটি নামে একটি কানাডিয়ান সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সিইও ইভান টসারিনি দাবি করেছেন, ডিপসিকের কোডে এমন গোপন প্রোগ্রাম রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের তথ্য সরাসরি চীন সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Sugar, edible oil imports surge as dollar supply improves

Bangladesh’s imports of key essential commodities rose in the first quarter of fiscal year 2025-26 (FY26), supported by improved availability of foreign exchange and lower prices in the international market.

7h ago