যে কারণে শিশুদের জন্য প্রয়োজন ইউটিউব কিডস
প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান যুগে খুব অল্প বয়সেই স্মার্ট ডিভাইস ও ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে শিশুরা। শিক্ষামূলক ভিডিও, কার্টুন, ছড়া কিংবা গল্প— সবকিছুর সহজলভ্য মাধ্যম এখন ইউটিউব। কিন্তু বিস্তৃত এই বিশাল প্ল্যাটফর্মের সব ভিডিও কনটেন্ট শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়।
অভিভাবকদের এখন সচেতন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময়। শিশুদের জন্য তারা ইউটিউব নাকি ইউটিউব কিডস ব্যবহার করবেন!
ইউটিউব বনাম ইউটিউব কিডস
মূল ইউটিউব একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নানা বয়সের, নানা ধরনের কনটেন্ট আপলোড করা হয়। সেখানে অ্যালগরিদমের ওপর ভিত্তি করে ভিডিও সাজানো হয় এবং একটি ভিডিও দেখতে গিয়ে শিশুরা অন্য অনুপযুক্ত ভিডিওতেও ক্লিক করে ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, ইউটিউব কিডস শিশুদের জন্য একটি আলাদা অ্যাপ, যেখানে বয়সের ভিত্তিতে যাচাই করে শিশুবান্ধব ভিডিওগুলোই নির্বাচিত হয়। এতে আরও আছে বয়সভিত্তিক ফিল্টার, কনটেন্ট কন্ট্রোল এবং সময় নির্ধারণের সুযোগ।
ইউটিউব কিডস কেন প্রয়োজন?
- নিরাপদ কনটেন্ট: ইউটিউব কিডস কেবল শিশুদের উপযোগী ভিডিও দেখায়। সহিংসতা, ভয়ের উপাদান বা অশালীন বিষয়বস্তুর প্রবেশাধিকার নেই।
- অভিভাবকের হাতে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা: এই অ্যাপে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অপশন থাকে। যা দিয়ে মা–বাবা নির্ধারণ করতে পারেন কোন ভিডিও দেখা যাবে, কতক্ষণ দেখা যাবে, এমনকি কী ধরনের কনটেন্ট অনুমোদনযোগ্য।
- বয়সভেদে কনটেন্ট: ৪ বছর পর্যন্ত, ৫–৮ বছর এবং ৯–১২ বছর— এই তিনটি বয়স বিভাগে ভাগ করে কনটেন্ট ফিল্টার করা হয়, যাতে শিশুদের মানসিক বিকাশের উপযোগী ভিডিও সামনে আসে।
- বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ: ইউটিউব কিডসে বিজ্ঞাপন থাকে সীমিত এবং কোনো রকম অশোভন বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন দেখানো হয় না। যা সাধারণ ইউটিউবে প্রায়ই ঘটে।
- স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ: শিশুরা যেন নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ভিডিও না দেখে, সেজন্য ইউটিউব কিডসে রয়েছে টাইমার সুবিধা।
ইউটিউব ব্যবহারের ঝুঁকি
মূল ইউটিউবে কনটেন্টের বিশৃঙ্খলা ও অ্যালগরিদমভিত্তিক সাজেশন শিশুদের জন্য ভয়ানক হতে পারে। কোনো ভুলবশত সহিংস, বিভ্রান্তিকর বা প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্টে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা কম নয়। অনেক সময় চটকদার থাম্বনেইলে শিশু ক্লিক করে বসে। যার ফল হতে পারে নেতিবাচক মানসিক প্রভাব।
অভিভাবকদের করণীয়?
- ইউটিউব কিডস ডাউনলোড করে সেটআপ করে দিন।
- শিশু কোন ভিডিওগুলো দেখছে তা নিয়মিত মনিটর করুন।
- স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করে দিন।
- শিশুর সামনে নিজেও ডিভাইস ব্যবহার সীমিত করুন। কেননা শিশুরা দেখে শেখে।
শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের মানসিক ও নৈতিক বিকাশে আমরা যেমন বই, খাবার বা খেলনার ক্ষেত্রে সচেতন, প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তেমন সচেতন হওয়া প্রয়োজন। অনলাইনে শিশুদের নিরাপদ রাখতে ইউটিউব কিডস একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর মাধ্যম।
তাই সময় এসেছে প্রযুক্তিকে কেবল উপভোগ্য নয় বরং নিরাপদভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করার। যার শুরুটা হতে পারে ইউটিউব কিডস দিয়ে।


Comments