গ্রহাণু ঝড় কিংবা ব্ল্যাকহোলে পড়লে কী হতে পারে পৃথিবীর

ছবি: সংগৃহীত

কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে অগণিত বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করে টিকে আছে আমাদের পৃথিবী। তার এই টিকে থাকার লড়াইয়ে মানুষ পেয়েছে বসবাসের জায়গা। কিন্তু, যদি এমনটা হয়, ভেসে বেড়ানো পৃথিবী নামের এই পাথর এমন মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি হলো; যা তার বুকে আশ্রয় নেওয়া মানবজাতিকে ধ্বংস করে ফেলল? এমন সম্ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটতে পারে বেশ কিছু উপায়ে। সেরকম ৫টি উপায় নিয়ে এই আয়োজন- 

কোন গ্রহাণু যদি তীব্র ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করে

যদি কোন গ্রহাণু ভীষণ শক্তি ও তাপ নিয়ে পৃথিবীর কোন সমুদ্রে আঘাত করে, তবে সমুদ্রে সৃষ্টি হতে পারে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) প্রবল তাপ, গ্রহাণু যদি এত ব্যাপক তাপ উৎপন্ন করার মতো ততটা বড় হয়ে থাকে। এর ফলে, হাইপারকেইন বা বিশাল ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে। বাতাস তখন শব্দের গতির সমান গতিতে বইতে শুরু করবে। মেঘ ৪০ কিমি উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। স্ট্রাটোস্ফিয়ারের বাতাস জল ও অ্যারোসল নিক্ষেপ করতে থাকবে। তাতে করে, ওজোনস্তর ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবী তখন পুড়ে হবে ছারখার। 

বৃহস্পতি যদি নক্ষত্রে পরিণত হয়

আরও অধিক ভর নিজের ঝুলিতে নিতে পারলে বৃহস্পতি গ্রহ পরিণত হতে পারে নক্ষত্রে। ফলে নতুন নক্ষত্র বৃহস্পতি সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থান করবে, তাই গ্রহ-উপগ্রহ তখন তাদের নিজেদের কক্ষপথ পরিবর্তন করবে। প্রত্যেকে বৃহস্পতির নিকটে চলে আসবে এবং এই নিকটে যাওয়ার কারণে তারা ঝলসে যাবে। অথবা মহাকর্ষ বলের দরুন আমরা ছিটকে পড়তে পারি সৌরজগতের বাইরে। তাই যদি হয়, সূর্যের অনুপস্থিতির কারণে পৃথিবীতে দেখা দেবে মৃত্যু শীতলতা।  

সূর্য যদি পৃথিবীকে গ্রাস করে 

সূর্যে প্রতি সেকেন্ডে ৬০০,০০০,০০০ টন হাইড্রোজেন পুড়ে যাচ্ছে। যদি এমন হয় যে এই শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেল?

আর তা যদি হয়েই যায়, তবে সূর্য হিলিয়ামে পূর্ণ হয়ে উঠবে এবং সংকুচিত হতে শুরু করবে। ক্রমবর্ধমান চাপ ও তাপ সূর্যের বিপুল পরিমাণ শক্তির নিঃসরণ ঘটাবে। সূর্যের বহিঃস্তর বহির্দিকে বিস্তার নেবে। তাতে পৃথিবীতে সৃষ্টি হবে মৃত্যু জাগানিয়া তাপপ্রবাহ। আমাদের সমুদ্রগুলো বাষ্পীভূত হতে শুরু করবে। পৃথিবীর পৃষ্ঠতল তাপে দগ্ধ হবে। শেষমেশ, সূর্য গ্রাস করবে পৃথিবীকে। 

কৃষ্ণগহ্বরে পৃথিবী নিঃশেষিত হলে

সূর্য ধসে পড়ার আগে যদি আরও বেশি ভর অর্জন করে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে রহস্যপূর্ণ ঘটনা অবলোকনের সুযোগ থাকছে আমাদের-- ব্ল্যাকহোলের জন্ম। 

সূর্য এই ধরনের মহা বিপর্যয় ঘটানোর জন্য ততটা বড় না। কিন্তু পৃথিবীর সম্মুখে যদি কোন ব্ল্যাকহোল হাজির হয়, অসম মহাকর্ষীয় টান জগতের বিকৃতি সাধন শুরু করবে। ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ছড়িয়ে পড়বে সমগ্র পৃথিবীজুড়ে।

সবগুলো আগ্নেয়গিরি যদি একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়

পৃথিবীর সবগুলো আগ্নেয়গিরি একসঙ্গে বিস্ফোরিত হলে, বিস্ফোরণের দরুন সৃষ্ট ধোঁয়া ও তাপ পৃথিবীকে গ্রাস করবে।

অন্যদিকে, ১ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস (১ হাজার ৮৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে পাথর তখন ৭০০ কিমি/ঘণ্টা (৪৫০ এমপিএইচ)-এর কাছাকাছি গতিতে ছুটে চলবে। 

এত সংখ্যক উত্তপ্ত, গলিত পাথর পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে আঘাত করলে, পৃথিবী তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। মেরুদ্বয় পুনরায় সংস্থাপিত হবে। ছাই এবং গ্যাসের পুরু স্তর পৃথিবীর ঘিরে ফেলবে। পরিণতিতে, পৃথিবীর বুকে আর সূর্য রশ্মির দেখা মিলবে না এবং যখন লাভা ঠান্ডা হয়ে পড়বে- পৃথিবীর তাপমাত্রা অতিদ্রুত হ্রাস পাবে। জগতের বুকে নেমে আসবে আরেকটা বরফ যুগ। যাতে সমগ্র ধরিত্রীর বিনাশ ঘটবে না ঠিক, তবে সেই বরফ যুগ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত জীবনের অস্তিত্ব টিকে থাকার সম্ভাবনা ধ্বংস হবে।

 

তথ্যসূত্র: হোয়াটইফ, থটকো.কম

 

Comments

The Daily Star  | English
Largest Islamic bank in the making

Largest Islamic bank in the making

The five banks slated for consolidation are First Security Islami Bank, Union Bank, Global Islami Bank, Social Islami Bank and Exim Bank.

12h ago