গুগল পিক্সেলের এআই ফটো টুল নিয়ে বিতর্ক

গুগল পিক্সেলের বাস্তবসম্মত ছবি এডিটের কারণে বিতর্কের সৃষ্ট হয়েছে। বায়ের ছবিটি মূল, ডানেরটি এডিট করা। ছবি: সংগৃহীত
গুগল পিক্সেলের বাস্তবসম্মত ছবি এডিটের কারণে বিতর্কের সৃষ্ট হয়েছে। বায়ের ছবিটি মূল, ডানেরটি এডিট করা। ছবি: সংগৃহীত

প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে 'ক্যামেরা কখনো মিথ্যা বলে না', এই উক্তির সত্যতা দিন দিন কমে আসছে। স্মার্টফোনের যুগে এডিট করে ছবির রঙ থেকে শুরু করে আলোর মাত্রা পরিবর্তনের বিষয়গুলো নিয়ে চলমান বিতর্ক আরও উসকে দিয়েছে গুগল পিক্সেল ফোনের সর্বশেষ এআই প্রযুক্তি।

সম্প্রতি বাজারে আসা গুগলের স্মার্টফোন পিক্সেল ৮ ও পিক্সেল ৮ প্রোর সঙ্গে থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ভিত্তিক টুলগুলো চোখের নিমিষেই ছবিতে মানুষের মুখের ভাব পরিবর্তন করে ফেলতে পারছে—হাসি মুখ হয়ে যাচ্ছে গোমড়া, আর বিষণ্ণ মানুষকে মনে হচ্ছে উৎফুল্ল! যা এর আগে এত নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হয়নি। এতেই সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। 

গুগল পিক্সেলের ম্যাজিক এডিটর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
গুগল পিক্সেলের ম্যাজিক এডিটর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

গ্রুপ ফটোতে ক্যামেরার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকানো বা প্রয়োজনের সময় হাসতে ভুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই আছে। তবে গুগল এখন মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে আগে তোলা ছবি থেকে আপনার মুখের ভাব বা অভিব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে নতুন ছবিতে নিখুঁত পরিবর্তন আনতে পারে। গুগল এই টুলের নাম দিয়েছে 'বেস্ট টেক'। 

তাই বাস্তবে ছবি তোলার সময় না হাসতে পারলেও ছবিতে গুগল আপনাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখাতে পারবে এবং নতুন ছবিগুলোকে এডিট করার ছবি বলে মনেই হবে না।

এছাড়াও, পিক্সেলের এই ডিভাইসগুলো ছবির যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত উপাদান মুছে ফেলতে, সরাতে এবং নতুন আকার দিতে সক্ষম। 'ম্যাজিক এডিটর' টুলের সাহায্যে আপনি ছবি থেকে মানুষ, আশেপাশের দালান বা অন্য যেকোনো কিছু মুছে ফেলতে পারবেন৷ মুছে ফেলার পর সেখানে কিছু ছিল কি না, তা খালি চোখে বোঝার উপায়ই থাকে না।

গুগল পিক্সেলের ম্যাজিক এডিটর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
গুগল পিক্সেলের ম্যাজিক এডিটর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

লাখো ছবি থেকে সংগ্রহ করা জ্ঞান ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা 'ডিপ লার্নিং' প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি করে থাকে।

আগেও এ ধরনের এডিটিং সম্ভব ছিল, কিন্তু পেশাদার ও খুব ভালো ফোটো এডিটিং দক্ষতাসম্পন্ন মানুষকে পিসিতে বসে ফটোশপ বা এরকম টুল দিয়ে, সময় নিয়ে এই কাজগুলো করতে হত। এখন মানুষের হাতে মুঠোয় চলে এসেছে এই প্রযুক্তি।

গুগল পিক্সেলের ম্যাজিক এডিটর ব্যবহার করে 'মাথা' বদলে নেওয়া যায় নিমিষেই। ছবি: সংগৃহীত
গুগল পিক্সেলের ম্যাজিক এডিটর ব্যবহার করে 'মাথা' বদলে নেওয়া যায় নিমিষেই। ছবি: সংগৃহীত

এমন কী, এসব টুল প্রয়োগ করতে আপনাকে পিক্সেল ফোনে তোলা ছবিই ব্যবহার করতে হবে—বিষয়টি এমনও নয়। পিক্সেল ৮ প্রো ব্যবহার করে আপনি আপনার ফোনের মেমোরিতে সেভ করা যেকোনো ছবিতেই ম্যাজিক এডিটর বা বেস্ট টেক ব্যবহার করতে পারবেন। 

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষক প্রশ্ন তুলেছেন।

গুগল পিক্সেল ৮ প্রো। ছবি: সংগৃহীত
গুগল পিক্সেল ৮ প্রো। ছবি: সংগৃহীত

বিষয়টিকে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে ভার্জ ও টেক রাডারের মতো প্রযুক্তিভিত্তিক ওয়েবসাইট।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক্স ও ডিসপ্লে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাফাল মন্টিউক বলেন, 'এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ছবিগুলোকে বাস্তবের মতো দেখানোর জন্যে স্মার্টফোনে এআই ব্যবহার হয়নি।'

তিনি বলেন, 'মানুষ বাস্তবতা তুলতে চায় না, তারা সুন্দর ছবি তুলতে চায়। স্মার্টফোনে ছবি তোলা ও এডিটের উদ্দেশ্যই হল সুন্দর ছবি তৈরি করা। এটা বাস্তবসম্মত কী নয়, সেটা মুখ্য নয়।'

গুগল পিক্সেল ৮ ও ৮ প্রো। ছবি: সংগৃহীত
গুগল পিক্সেল ৮ ও ৮ প্রো। ছবি: সংগৃহীত

যদিও এই নতুন প্রযুক্তিগুলো বাস্তবতা নিয়ে কিছু নৈতিক প্রশ্ন উত্থাপন করছে; তবে অধ্যাপক মান্টিউক বলেন যে এক্ষেত্রে 'আমাদের নিজের চোখের সীমাবদ্ধতাগুলোও বিবেচনা করতে হবে।'

ভাবানুবাদ করেছেন আহমেদ বিন কাদের অনি

তথ্যসূত্র: বিবিসি

 

Comments

The Daily Star  | English

No scope to avoid fundamental reforms: Yunus

Conveys optimism commission will be able to formulate July charter within expected timeframe

4h ago