বিশ্বজুড়ে শীর্ষে আইফোন, তবুও কেন চাকরি ছাড়ছেন অ্যাপলের কর্মকর্তারা
অ্যাপল সিইও টিম কুক এ বছরের নভেম্বরে ৬৫ বছরে পা দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তার এখন উদযাপনের সময়। অথচ তাকে নিয়ে অবসরের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেননি। এছাড়াও আলোচনায় আছে অ্যাপলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক চাকরি ছাড়ার খবর।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন? এখনই-বা কেন কোনো নির্বাহী অ্যাপলের মতো কোম্পানি থেকে চলে যেতে চাইবেন?
ম্যাশেবলের প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপল হয়তো এখন আর বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি নয় (দীর্ঘদিন শীর্ষে থাকার পর)। কিন্তু কোম্পানিটির বাজারমূল্য বাড়ছে এবং বর্তমানে তা ৪ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তাই অ্যাপল এনভিডিয়ার নিচে থাকলেও ব্যবধান খুব বেশি নয়। এনভিডিয়ার শেয়ার মূল্য কমতে থাকায় যে কোনো সময়ই অ্যাপল আবার শীর্ষে ফিরতে পারে।
অ্যানালিটিক্স প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্টের রিপোর্ট বলছে, ২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে আইফোন আবারও অ্যান্ড্রয়েডকে পেছনে ফেলেছে।
ম্যাশেবলের প্রতিবেদনে বলা হয়, আইফোন ১৬-এর চারটি মডেলই বিশ্বের টপ-১০ স্মার্টফোন তালিকার শীর্ষ চারটি স্থান দখল করেছে। এরপর রয়েছে গ্যালাক্সি এ১৬ ৫জি, আরও চারটি গ্যালাক্সি মডেল এবং আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স।
এদিকে গত সপ্তাহে একের পর এক অ্যাপলের শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। প্রথমে ছিলেন মেশিন লার্নিং ও এআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জন গিয়ানান্দ্রেয়া।
অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স যখন অ্যান্ড্রয়েডের গুগল জেমিনাইয়ের পেছনে পড়ে আছে, মেটা যখন অ্যাপলের বহু এআই ট্যালেন্ট টেনে নিচ্ছে, তখন শীর্ষ কর্মকর্তার চাকরি ছাড়ার ঘোষণা অ্যাপলে জন্য কোনো ভালো খবর নয়।
কিন্তু গিয়ানান্দ্রেয়া চলে গেলে অ্যাপলের ওপর হয়তো খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ তার জায়গায় এসেছেন অমর সুব্রামানিয়া। তিনি ২০২৩ সালে গুগল জেমিনাই বাজারে আনার অন্যতম কারিগর ছিলেন। মাইক্রোসফটেও তিনি এআই টিমে কাজ করেছিলেন। সুতরাং তার অ্যাপলে যোগ দেওয়া টিম কুকের ওপর আস্থারই ইঙ্গিত।
এরপর অ্যালান ডাইয়ের চাকরি ছাড়ার খবর এলো। তিনি অ্যাপলের ডিজাইন প্রধান। তিনি তৈরি করেছিলেন 'লিকুইড গ্লাস'। যা ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রশংসা ও বিতর্ক দুইই কুড়িয়েছে। তিনি যাচ্ছেন মেটায়।
ব্লুমবার্গের মার্ক গুরমান এটিকে বড় ক্ষতি বলেছেন। তার জায়গায় আসছেন স্টিফেন লেমে, যাকে নিয়ে অ্যাপলের কর্মীরা আশাবাদী।
এছাড়া গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, অ্যাপলের চিপ প্রধান জনি স্রুজি চলে যাবেন। কিন্তু তিনি নিজেই কর্মীদের বলেছেন, 'তার যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।'
এছাড়া জেনারেল কাউন্সেল কেট অ্যাডামস ও লিসা জ্যাকসন অবসরে যাচ্ছেন বলে ম্যাশেবলের প্রতিবেদনে বলা হয়।
এখন মূল প্রশ্নটি আসলে টিম কুককে ঘিরে। তিনি ২০১১ সালের ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিকে বর্তমানে ৪ ট্রিলিয়নে আনা মানুষ। তাকে নিয়ে গুঞ্জন, তিনি ২০২৬ সালে কোনো না কোনোভাবে কোম্পানি থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই ঘোষণা করেননি।
ম্যাশেবল বলছে, কুকের উত্তরসূরি সম্ভবত জন টারনাস। তিনি বর্তমানে হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ২৪ বছর ধরে অ্যাপলে কাজ করছেন। টারনাস প্রায় সব আইফোন ও আইপ্যাডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বাইরে থেকে অ্যাপলে অস্থিরতা দেখা গেলেও, আসলে কোম্পানিটি আগের মতোই স্থিতিশীল। আইফোন বিক্রি বাড়ছে, নতুন প্রযুক্তি এগোচ্ছে, আর নেতৃত্বের রদবদলের মধ্যেও অ্যাপল এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক অ্যাপলের পুরনো স্লোগানের মতো, 'সবকিছু বুঝতে চাইলে, একটু ভিন্নভাবে ভাবতে হয়।'


Comments