‘ছাত্রকে বাঁচাতে গিয়ে শিক্ষকদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে, আমরা তীব্র নিন্দা জানাই’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী গানের মিছিল ও সমাবেশ। ছবি: স্টার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী গানের মিছিল ও সমাবেশ। ছবি: স্টার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর হামলা, আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে গণগ্রেপ্তার এবং মিথ্যা মামলা দায়েরের মাধ্যমে হয়রানির প্রতিবাদে প্রতিবাদী গানের মিছিল ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষকও জাবির এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একটি প্রতিবাদী গানের মিছিল বের করেন।

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন ফজিলাতুন্নেছা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়। পরে আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সেখান থেকে একই পথে আবারও প্রতিবাদী গানের মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হন তারা। সেখানে এক সাংস্কৃতিক সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের পাদদেশে একটি প্রতিবাদী পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করেন।

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামালউদ্দিন রুনু বলেন, 'আপনি এখনো মিথ্যা বলছেন। বিশ্ব মিডিয়া "ক্রোকডাইল টিয়ারস" বলে আখ্যায়িত করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ছাত্ররা যে পথ দেখিয়ে গেছে, আমরা শিক্ষকরা সেই পথে হাঁটব, আপামর জনতা হাঁটব।

তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি, আমরা যে রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, আপনি সেই পথে বাঁধা হিসেবে উপনীত হয়েছেন। আগামীতে যদি এভাবে জেলে নিতে থাকেন, তাহলে আমরা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করব। প্রয়োজনে জেল ঘেরাও করব। তবুও আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে কুণ্ঠিত হব না।'

দর্শন বিভাগের শিক্ষক রায়হান রাইন বলেন, বর্তমান সময়ে যে পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতিতে আমাদের একটি উপলব্ধি খুবই স্পষ্ট বর্তমান সরকার এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে যে ত্রাস এবং ভয়ের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের মানুষ ছাত্র-জনতা সেই ভয়কে জয় করেছে। তারা এখন বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে জানে।'

তিনি বলেন, 'এ আন্দোলনে ষড়যন্ত্র খুঁজে কোনো লাভ নেই। আমাদেরকে নতুন করে নতুন পথ সৃষ্টি করতে হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্তমান সরকার যে ভয়ের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে সেটি সবাই উপেক্ষা করছে কিন্তু এখনো সরকার সেটি উপলব্ধি করতে পারছে না। ন্যায্য আন্দোলনের উপর তারা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করছে। তাদেরকে দমন করার চেষ্টা করছে, ধরপাকড় করছে। আমরা লক্ষ্য করছি মামলা দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে সারা দেশজুড়ে আটক-গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যে সাঈদ বাংলাদেশের প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে সেই সাঈদের হত্যা মামলায় একজন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে। আজকে এ আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে ঢাকায় সেতু ভবনের নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অথচ ঘটনার দিন সে ক্যাম্পাসেই ছিল। সারাদেশে মিথ্যা মামলা দিয়ে নানা ধরনের ট্যাগ দিয়ে আন্দোলনকারীদের যেভাবে গ্রেপ্তার, জুলুম করা হচ্ছে আমরা সেটির তীব্র নিন্দা জানাই।'

একই বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, 'পুরো বাংলাদেশ আজ শিক্ষাঙ্গন। সবাই সরকারের চাল বুঝে গিয়েছে "দিনে নাটক, রাতে আটক" খেলা খেলছে তারা। জাবির যে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে আমরা তাদের মুক্তি চাই। আর না হলে যেখানে তাদের আটকে রাখা হয়েছে আমরা সেখানে আসব, এর জন্য যে সমস্যা হবে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।'

ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভিন বলেন, 'এই স্বাধীন দেশের মাটিতে একফোঁটা রক্ত আমি আর দেখতে চাই না। আন্দোলন চলছে, সারা দেশে আন্দোলন চলছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে, ছাত্রকে বাঁচাতে গিয়ে শিক্ষকদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।'

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ বলেন, গত ১৫ দিন ধরে সরকার দমননীতি অবলম্বন করার কারণে পথে পথে ছাত্ররা যেভাবে শহীদ হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন, যেভাবে ছাত্রদের অঙ্গহানি হয়েছে, কেউ কেউ সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, আমরা তার বিচার চাইতে যাওয়ার পরে গণগ্রেপ্তার শুরু হয়েছে, ছাত্রদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যারা ছাত্রদের সহযোগিতা করেছে তাদেরও উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে, মামলা দেয়া হচ্ছে। গতকয়েক দিনে সরকার যেভাবে আইনজীবী, র‍্যাপার এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের উপরে যে দমননীতি প্রয়োগ করছে তা দেখে আমরা কোনোভাবেই দেশকে আর স্বাধীন দেশ বলতে পারছি না।  এই দমন নীতির তীব্র নিন্দা জানাই, পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা, নির্যাতনের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত যে আন্দোলন চলছে তা চলবে বলেও জানান এই শিক্ষক।

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

19m ago