রাবিতে র‍্যাগিং: ‘শেষবারের মতো মাকে কল দে’

রাবি ভর্তির আবেদন
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সিনিয়র শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ রকি জানান, দুই সিনিয়র শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করার জন্য চাপ দেন এবং শেষবারের মতো কথা বলে নিতে বলেন। বলতে বলেন আর কোনোদিন দেখা নাও হতে পারে।

গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুরের লেবুবাগান এলাকার 'বিশ্বাস ম্যানসন' ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে।

যাদের নামে অভিযোগ করা হয়েছে তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নাজমুল হোসেন নাবিল এবং অন্তর বিশ্বাস।

দর্শন বিভাগের (সেশন ২০২৩-২৪) শিক্ষার্থী রকি দাবি করেন, অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী তার কক্ষে ঢুকে তাকে অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর প্রশ্ন করতে শুরু করেন।

লিখিত অভিযোগে রকি বলেন, 'আমি মোহাম্মদ রকি গতকাল (রোববার) রাত পৌঁনে ১২টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছি। ওই ছাত্রাবাসের ২০১ ও ২০৫ নম্বর রুমের দুই জন শিক্ষার্থী গতকাল রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে আমার কক্ষে আসেন। শুরুতেই তারা আমাকে নানা রকম বিব্রতকর প্রশ্ন করেন। ফলে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হই। কথাবার্তার একপর্যায়ে তারা আমাকে বলেন, "তোকে হলের গেস্টরুমে নিয়ে যাব। গেস্টরুমে নিয়ে গিয়ে তোকে আদর আপ্যায়ন করব। শেষবারের মতো তোর মাকে কল দে, কল দিয়ে বলবি আর কোনো দিন দেখা নাও হতে পারে, আমি কোনো ভুল করলে আমাকে মাফ করে দিও।" একপর্যায়ে তারা বলেন, "আবরার ফাহাদ কে, কীভাবে মারা হয়েছিল, জানিস?" আমি বলি, "জি, ভাই পিটায়ে মারা হয়েছিল।" তারপর তারা বলেন, "তোকে এভাবে মারলে তখন কি করবি?" তারপর আমি চুপ থাকি। এরপর তারা হুমকি দিয়ে বারবার আমাকে হলের গেস্টরুমে যেতে বলে। আমি যেতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে বলেন, 'তুই যদি হলের গেস্টরুমে যেতে না চাস তাহলে মেসে শিবির ডেকে নিয়ে এসে তোকে মারব।'

এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন রকি। এরপরই ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের ডেকে পাঠানো হয় প্রক্টর অফিসে। সেখানে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মশিহুর রহমান ও দুই সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও নাসির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

অভিযুক্ত নাজমুল হোসেন নাবিল সেদিন উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করলেও হয়রানি করেননি বলে দাবি করেন। অন্যদিকে অন্তর বিশ্বাস দাবি করেন রকির সঙ্গে তার কথাবার্তা স্বাভাবিক ছিল এবং ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি কথা বলেছেন।

আবরার ফাহাদের কথা নিয়ে জানতে চাইলে অন্তর বলেন, ক্যাম্পাসে যেভাবে র‍্যাগিং হতো সেভাবে হয় না। তিনি বলেন, আবরার ফাহাদকে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে।

তিনি ছাত্রশিবির নিয়ে হুমকিকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করেন।

রাবি প্রক্টর মাহবুবুর রহমান এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে আমরা এই বিষয়গুলোকে কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না। আমরা অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।

অভিযোগটি মার্কেটিং বিভাগের একাডেমিক কমিটির কাছে পাঠানো হবে, যা পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির কাছে সুপারিশ জমা দেবে।

র‍্যাগিংকে 'সামাজিক অপরাধ' উল্লেখ করে গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রক্টর অফিস থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতা ও শিক্ষার পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে বলে এতে জানানো হয়। র‍্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত কোনো শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করা হয়েছিল।

  

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

25m ago