জবির সিন্ডিকেটে জকসু সংবিধির প্রস্তাব গৃহীত, থাকছে না বয়সসীমা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জকসু) সংবিধি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এর ফলে প্রথমবারের মতো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পথ সুগম হলো।

সংবিধি অনুসারে, নির্বাচনে ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে থাকছে না কোনো বয়সসীমা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সব শিক্ষার্থীরা জকসুতে ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। তবে পূর্ণকালীন চাকরিজীবী এবং এমফিল ও পিএইচডির মতো পেশাদার ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিতে পারবেন না।

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত বিশেষ সিন্ডিকেট সভা চলে। রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাল্ট করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সিন্ডিকেট সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের উপাচার্য বলেন, 'আজকের বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় জকসুর সংবিধির অনুমোদন হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার বা রোববারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষ করে পরবর্তী পর্যায়ে জকসু আইন করার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবো। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পর আমরা নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা করব।'

তিনি আরও বলেন, খসড়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা আছে সেগুলো পাস হয়েছে। এছাড়া, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

'পূর্ণকালীন চাকরি যারা করে, তারা ভোটার হতে পারবে না। এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। খণ্ডকালীন চাকরি যারা করে, তারা ভোটার হতে পারবে,' বলেন তিনি।

জকসু খসড়া সংবিধি বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী ছাড়া প্রফেশনাল পিএইচডিসহ কোনো পেশাদার কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ভোটার হতে পারবে না। একইসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিশেষ ডিগ্রি বা কোর্সে অধ্যয়নরত কিংবা দেশ-বিদেশের সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত কেউ ভোটার হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

জকসুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণআন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ ঐতিহাসিক চেতনাকে ধারণ ও প্রচার করা এবং স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জাতীয় ঐক্যের চেতনাকে দৃঢ় করা; বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট, হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতা গড়ে তোলা; বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একাডেমিক ও অতিরিক্ত একাডেমিক সুযোগ-সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা; শিক্ষার্থীদের প্রকৃত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের দক্ষতা তৈরি করা; বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতা করা; দেশ-বিদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ব্যক্তির স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা প্রকাশ ও চর্চা নিশ্চিত করা।

জকসুর খসড়া সংবিধিতে দেখা যায়, জকসুর নির্বাহী সদস্য ২১ জন। এর মধ্যে পদাধিকার বলে উপাচার্য হবেন জকসুর নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হবেন নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ। বাকি ১৯ পদে নির্বাচন হবে।

জকসু সংবিধিতে যুক্ত হয়েছে হল সংসদের বিধি। এতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট হলে নাম অনুসারে হল শিক্ষার্থী সংসদের নামকরণ করা হবে। হল সংসদের উদ্দেশ্য বিধিতে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাতটি নির্দেশিকা উল্লেখ করা হয়েছে। হলের প্রোভোস্ট পদাধিকার বলে হল শিক্ষার্থী সংসদের সভাপতি হবেন। হল সংসদের নির্বাহী কমিটির সদস্য হবেন ১৭ জন।

এদিন সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, শিক্ষার্থীদের পক্ষে আছে সব সিদ্ধান্ত। দ্রুতই জকসু হবে। জকসুর রোডম্যাপের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আইন পাসের পরেই রোডম্যাপ। আমরা কাজ করছি দ্রুত করার জন্য।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

10h ago