যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন

ছবি: সংগৃহীত

উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করবার সময়টা মূলত এখনই। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, বিভিন্ন বৃত্তি, গ্র্যান্টের জন্য তাদের ওয়েবসাইটে অ্যাপ্লিকেশন শুরু করার জন্য এটা সবচেয়ে ভালো সময়। 

যেসব শিক্ষার্থী মূলত আগামী বছরের 'ফল সিমেস্টার' অর্থাৎ আগস্টের ফান্ডিং প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হতে চান, তারাই এই সময়টায় আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করেন। 

আবেদন প্রক্রিয়ার শুরুতেই যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা প্রত্যেকেই চিন্তা করি তা হলো, একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং, প্রফেসরদের গবেষণার তালিকা এবং ফান্ডিং। এক যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যদিও র‍্যাঙ্ক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের অবশ্যই তারতম্য রয়েছে। তাই হাজারো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনগুলো বাছাই করব, এটা অনেকটাই সময়সাপেক্ষ এবং অনেক ক্ষেত্রে অনিশ্চিতও বটে। 

ছবি: নাদিয়া রহমান

প্রথমত, আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করব, সেখান থেকে ফান্ড পাব কি না, পেলেও কতখানি, সেখানে আমার প্রফেসর কেমন হবে; এগুলো একেবারেই অজানা। যত হিসাব করেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করি না কেন, অনেক কিছুই আমাদের পরিকল্পনার বাইরে চলে যায়। এবং এই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আমাদের ক্যারিয়ারের অনেকাংশ, জীবনের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় নির্ভর করে।

নিজে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়াশোনা করছি, তাই নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পাড়ি একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জন্য আসলে পরিবেশটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান, বিভাগের র‍্যাঙ্কের পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় পরিকল্পনায় রাখা প্রয়োজন। 

স্টেটের অবস্থান এবং জীবনযাপনের ব্যয়

যুক্তরাষ্ট্রে একেকটি স্টেট, শহর একেক রকম। শহর, উপ-শহরের পারিপার্শ্বিকের ওপর নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ। যেমন অনেকেই আমরা শহরে বেড়ে উঠেছি। শহরের অন্যতম সুবিধা হলো, গ্রোসারি কিংবা বাজার, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন খাবারের দোকান বা কফিশপ। অনেক সময় এত ব্যস্ততা থাকে, তখন প্রয়োজনীয় সময়ে কেনাকাটা বা রান্নার সময় বাঁচাবার জন্য এই দোকানপাট আপনার প্রয়োজন হবেই। অন্তত সারা দিন ক্লাসের পর কফিশপটাও অনেক আপন মনে হবে! 

এসব কিছু শহর বা ডাউনটাউনের আশপাশেই পাওয়া যাবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় যদি শহরের উপকণ্ঠে বা কিছুটা গ্রামীণ পরিবেশে হয়, তখন আপনাকে ধরেই নিতে হবে সেখানে আপনি অনেকটা একাকী থাকবেন। ক্লাস শেষে শান্ত, নিরিবিলি কোনো বনের পাশ দিয়ে আপনাকে বাড়ি ফিরতে হবে এবং আপনার সহপাঠীদের থাকবার জায়গাও হবে খানিকটা দূরে। 

যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে লিভিং কস্ট অনেক বেশি। ঢাকা শহরের মতো ট্রাফিকও পেয়ে যাবেন। আর বহু দেশের মানুষ। বড় শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফান্ডিং তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। আমরা অনেকেই মনে করি, ফান্ডিং যত বেশি তত সুবিধা। বিষয়টি কিন্তু এমন নয়! প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে সেই পরিমাণ ফান্ডই দেবে যেটুকু আপনার ওখানে থাকা-খাওয়ার জন্য প্রয়োজন। বড় শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফান্ড বেশি কেন না ওই শহরে বাড়ি বা ডর্ম ব্যয়বহুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে। তাই ফান্ডিং লেটার পাবার পরেই হিসেব করে নেওয়া প্রয়োজন, আপনার আয়ের পরিমাণ ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা! 

স্টেটের আবহাওয়া 

এই বিষয়টি আসলেই জেনে নিতে হয়, কেন না অনেকেই বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় ভোগেন ভিন্ন আবহাওয়াজনিত কারণে। আমরা যারা উষ্ণ পরিবেশে অভ্যস্ত, তাদের জন্য পাহাড়ঘেরা তুষারপাতের স্টেট অনুকূল নয়। যেহেতু আপনাকে দিনের একটা বড় অংশ পড়াশোনা এবং কাজে ব্যয় করতে হবে তাই শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা প্রয়োজন। শীতের সময়ে এখানে খুব দ্রুত সন্ধ্যা নেমে আসে। এবং এখানকার শীত অনেক নিষ্প্রাণ এবং ধূসর। অনেক শিক্ষার্থীকেই বলতে শুনেছি, শীতের এই মৌসুমে মানসিক বিষণ্ণতা কাজ করে। তুষারপাতের সময় কিছুদিন সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘরেই বসে পার করে দিতে হবে সময়। তাই আবহাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখুন। 

ডর্মের নিরাপত্তা 

সাধারণত ডর্মগুলো নিরাপদ হয়ে থাকে। তবে ডর্ম কিছুটা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকেই আশপাশের অন্যান্য আবাসনে থাকেন। সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগে থেকে জেনে নিন। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য লিজ ব্যবস্থা রয়েছে এবং এই লিজ আপনি ছয় মাস কিংবা এক বছরের আগে ছেড়ে আসতে পারবেন না, তাই হাউজিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সবকিছু আলোচনা করে নেওয়া প্রয়োজন। 

সম্ভব হলে পরিচিত যদি কেউ থেকে থাকেন, তার মাধ্যমে বিস্তারিত খোঁজ জেনে নিন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর কিংবা রাতের দিকে সেই আবাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন, বাস স্টপেজ থেকে কতখানি দূরত্বে, আশপাশে গ্রোসারি, ফার্মেসি আছে কি না জেনে নিন। 

ছবি: নাদিয়া রহমান

স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বা কমিউনিটি
 
একটি কমিনিটি যে কতটা প্রয়োজন, তা বিদেশের মাটিতে আসবার পর বোঝা যায়। এয়ারপোর্টে নামার পরেই মনে হবে, কেউ আপনাকে রিসিভ করছে কি না। এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর আপনার প্রয়োজন হবে খাবারের। এবং সেখানকার বাজার, ফার্মেসি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ, ব্যাংক এসব দেখিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো পরিচিত মানুষ থাকলে অনেকটা সহজ মনে হয়। এই স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বিভিন্ন স্পোর্টস, প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকে। অন্তত কিছু না হোক, সপ্তাহ শেষে দু-একজন বন্ধুও প্রয়োজন যাদের সঙ্গে আপনি এক কাপ চা হাতে গল্প করতে পারবেন।

 

নাদিয়া রহমান: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

 

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

55m ago