বিদেশের ডর্মে নানা দেশের খাবার ও ভিন্নভাষীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের গল্প

বন্ধুত্ব
ছবি: সংগৃহীত

যখন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ কেন্টাকিতে নতুন এসেছিলাম, তখন সবচেয়ে বেশি ভয় ছিল, একেবারে একা, পরিবার-পরিজন ছাড়া এই বিদেশ বিভূঁইয়ে কীভাবে থাকব? ভাষা, সংস্কৃতির ভিন্নতা রয়েছে, কিন্তু এরপরেও সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব গড়ে তুলবার যে বিষয়, সেখানে তো আরও অনেক স্তর থাকে। আর তখনই বুঝলাম, নিজ নিজ দেশের খাবার হতে পারে একটা অলিখিত ভাষা, যেটা সবাই বোঝে!

প্রথম দিকে সময়ের স্বল্পতা থাকায় ডাইনিং হলেই খাবার সেরে নিতাম, যেখানে একই ধরনের খাবার, এই ফ্রাইড চিকেন, টার্কিসহ হালাল মাংস, কিংবা পাস্তা-নুডলস। প্রায় প্রতিদিনই একই খাবার। কিন্তু ডর্মের কমন কিচেন ছিল ভিন্ন, যেখানে সবাই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির রান্না নিয়ে আসত। আমাদের ডর্মের ফ্লোরে ছিল বিশ্বের নানা দেশের ছাত্রছাত্রী। প্রত্যেকের নিজস্ব খাবারের রেসিপি, নিজস্ব ঘ্রাণ। কেউ কেউ ছিল দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে, কেউ বা আফ্রিকা মহাদেশের জোলোফ রাইস হাতে,  আবার কেউবা লাতিন দেশের।

আমি প্রায়ই সময় বাঁচাতে খিচুড়ি আর ডিমের কারি রান্না করতাম।

একদিন কোরিয়ার সুন'হে এসে বলল, 'তোমার রান্নার ঘ্রাণ খুব ভালো লাগছে। এটা কী? আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম, 'এটা খিচুড়ি, আমাদের দেশের এক ধরনের রাইস!'
উত্তরে জানলাম সুন'হের মাও ছোটবেলায় এই ধরনের খিচুড়ি রাঁধতেন।

ডর্মের এই ছোট রান্নাঘরটা আমাদের 'ছোট বিশ্ব' হয়ে উঠেছিল। খাবার তৈরি করতেও আমরা একে অপরকে সাহায্য করতাম, আবার নতুন কিছু শেখার সুযোগ হতো। কখনও কেউ মেক্সিকোর টাকো নিয়ে আসত, আবার কেউ থাইল্যান্ডের প্যাড থাই। খাবার তখন আর শুধু ক্ষুধা মেটানোর মাধ্যম রইল না, সেটা ছিল আমাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের একটি বড় মাধ্যম। বুঝতে শিখলাম, ভাষার নানা অস্পষ্টতা থাকলেও প্লেট ভাগাভাগি করলে বোঝাপড়া হয়, আর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

আমাদের মধ্যে যাদের পরিবার হাজার মাইল দূরে ছিল, তারা একে অপরকে পরিবার মনে করতে শুরু করলাম এই খাবারের আড্ডার মধ্য দিয়ে। কেউ যখন একা বোধ করত, তখন খাবার বানিয়ে অন্যদের ডেকে নিয়ে আসত। রোজার ইফতার হোক বা 'ফল' ঋতুর মার্কিন খাবার, উৎসবগুলোতে আমরা প্রায়ই একসঙ্গে হতাম। আমরা সেখানে শুধু খাবারই ভাগ করিনি, সংস্কৃতি, হাসি, আর নিজেদের নানান হাসি-দুঃখও ভাগ করেছি।

 

Comments

The Daily Star  | English
gold price rises in Bangladesh

Gold shines through 2025 amid price volatility

If there were a “metal of the year” award, gold would be a strong contender, maintaining an exceptional run even on the final trading day of 2025..Businesspeople said the retail gold market in Bangladesh has remained unstable over the past few months, driven by fluctuating global prices, s

Now