বিদেশে উচ্চশিক্ষা: প্রয়োজন ধৈর্য এবং লেগে থাকা

বিদেশে উচ্চশিক্ষা
ছবি: সংগৃহীত

দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। উন্নত মানের শিক্ষা, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি দেখা, নতুন কিছু শেখার আগ্রহ, এইসব মিলিয়ে অনেকেই নিজের দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান দূর দেশে। কিন্তু এই যাত্রাটা যতটা রঙিন মনে হয়, বাস্তবে কিন্তু ততটা সহজ নয়। এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে যে একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি দরকার, তা হলো—লেগে থাকা। কারণ, বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা কেবল একটি ডিগ্রি পাওয়ার গল্প নয়। এটি একটি লম্বা, জটিল, কখনো একাকিত্ব, কখনো অনিশ্চয়তায় পূর্ণ যাত্রা।

শুরুটা হয় স্বপ্ন দিয়ে

এই যাত্রার শুরুটা হয় পরিকল্পনা দিয়ে। এরপর আসে তথ্য খোঁজার ধাপ, কোন দেশে যাব? কোন ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করব? কীভাবে স্কলারশিপ পাব? আবার আবেদন করতে গিয়ে দেখা যায়, একেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম আলাদা। উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজা, কোর্স বাছাই করা, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা (যেমন, আইএইএলটিএস কিংবা জিআরই) দেওয়া, অসংখ্য কাগজপত্র তৈরি করা, সবই এক ধাপে হয় না। অনেক সময় একটা স্কলারশিপের জন্য কষ্ট করে ১০টা আবেদন করতে হয়, তবেই একটা কোথাও গিয়ে ফল আসে। প্রথম ধাক্কাটা এখানেই। কোথাও আবেদন বাতিল হয়, কোথাও ইমেইলের কোনো জবাবই পাওয়া যায় না। তখনই প্রথম বুঝি, শুধু মেধা নয়, টিকে থাকার জন্য লেগে থাকতে হবে।

আর শুরুটা একবার হয়ে গেলে, মনে হয় সব সহজ হয়ে গেল, তা কিন্তু নয়! ক্লাসে ভালো করতে হবে, গবেষণায় মন দিতে হবে, আবার নতুন পরিবেশে নিজের দৈনন্দিন জীবনটাও চালিয়ে নিতে হবে। এইসব মিলিয়ে অনেক সময় মানসিক চাপ বাড়ে। আরেকটা বড় বিষয় হলো, পরিশ্রম করলেই যে সঙ্গে সঙ্গে ফল মিলবে, তা নয়। অনেক সময় প্রচণ্ড পরিশ্রম করেও কাঙ্ক্ষিত ফল মেলে না। তখন হতাশা আসে, মনে হয় হয়তো আমি পারব না। কিন্তু এখানেই আসে 'ধৈর্য' আর 'লেগে থাকার' প্রয়োজন।

তবে এই কঠিন যাত্রার মাঝেও আছে আনন্দের মুহূর্ত। কোনো একটা কাজ সফলভাবে শেষ করার পর যে তৃপ্তি, পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে বন্ধু তৈরির সুযোগ, এবং নিজেকে নতুনভাবে চেনা, নিজের ওপর আস্থা রাখা।

গবেষণায় লেগে থাকার যুদ্ধ

যারা মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে বিদেশে যান, তাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি হলো গবেষণায় লেগে থাকা। কোনো একটি থিসিসের বিষয় নিয়ে বছরের পর বছর কাজ করতে হয়। একেক সময় দেখা যায়, কাজ বারবার বিফলে যাচ্ছে, সুপারভাইজার সন্তুষ্ট নন, কোনো পেপার রিজেক্ট হয়ে গেছে।

মানসিক চাপ আর একাকিত্ব, তবুও লেগে থাকা

বিদেশের জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো মানসিক চাপ। পরিবারের বাইরে থাকা, নিজের ভাষায় কথা না বলতে পারা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব। এসব কিছুই ধীরে ধীরে মনে ভার বাড়ায়। হয়তো খুব খারাপ একটা দিন গেল, হয়তো দেশে কোনো প্রিয়জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কিংবা শুধু খুব ক্লান্ত লাগছে। এত কিছুর মাঝেও, যারা নিজেদের প্রশ্ন করেন, আমি কেন এসেছি এখানে? উত্তরটা তখন পাওয়া যায়।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির সাবেক শিক্ষার্থী।

Comments

The Daily Star  | English
gold price rises in Bangladesh

Gold shines through 2025 amid price volatility

If there were a “metal of the year” award, gold would be a strong contender, maintaining an exceptional run even on the final trading day of 2025..Businesspeople said the retail gold market in Bangladesh has remained unstable over the past few months, driven by fluctuating global prices, s

Now