‘ছাত্র রাজনীতি মুক্ত’ হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পর ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বের করে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে 'কোনো ধরনের ছাত্র রাজনীতি' থাকতে পারবে না।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দেওয়া চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ অবস্থানের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ ছাড়া, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশও আসে সরকারের পক্ষ থেকে।

হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

ফলে, আজ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

আজ ভোর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হল থেকে তাদের ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখা যায়।

হলগুলো 'ছাত্র রাজনীতি মুক্ত' করার বিষয়ে আজ বুধবার ভোররাতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, 'আমাদের রাজনৈতিক অনুসারীরা আমাদের সঙ্গে নেই। নতুন ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রায় সবাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। আমরা নিজেরাই এখন শঙ্কার মধ্যে আছি।'

মুহসীন হল ছাত্রলীগের শীর্ষপদ প্রত্যাশীদের একজন আইনুল ইসলাম মাহবুব বলেন, 'হলে এখন বহিরাগত লোকজনে ভরে গেছে। তারা উস্কানি দিচ্ছে আমাদেরকে (ছাত্রলীগ)। কোনো কার্যক্রমের চেষ্টা করলে তারা আমাদের মারার হুমকি দিচ্ছে।'

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী অন্তত তিন নেতা রাত সাড়ে ১২টার দিকে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা হলে খুব নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি। রোকেয়া হলের ঘটনা জানার পর ঊর্ধ্বতন ছাত্রলীগ নেতাদের জানিয়েছি, কিন্তু কেউ সমাধান দিতে পারছেন না। হলে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিয়েছে।'

হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল মুসলিম হল ও অমর একুশে হল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

এসব হলে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীকে ঢুকতে দেয়নি।

দ্য ডেইলি স্টারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকলে ভোররাত ৪টার দিকে আসেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম।

শিক্ষার্থীরা হল প্রভোস্টের কাছে দাবি জানান, এই হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

এই আলোচনার চলার সময় হল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী হলের দখন নিতে এলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পরেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করে মোটরসাইকেলযোগে চলে যান।

এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেতাদের অন্তত ১০-১২টি রুমের দরজা ভাঙচুর করেন।

পরে হল প্রভোস্ট এক চিঠির মাধ্যমে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন।

হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের মাস্টার দা সূর্যসেন হলের কক্ষও ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা।

এই হলটির নিয়ন্ত্রণও নিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, কুয়েত মৈত্রী হল, সুফিয়া কামাল হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলকেও ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হল প্রভোস্টরা এ সংক্রান্ত চিঠিতে সই করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

People from all walks of life arrive by bus, train and other modes of transport

2h ago