শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ে পর্যাপ্ত গুরুত্বের অভাব এবং আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সাধারণ ধারনা না থাকায় প্রায়শই শিক্ষার্থীরা নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। এর ফলে তারা কোনো সমস্যায় পড়লেও সাধারণত অন্য কারো সহযোগিতা চান না।

আচল ফাউন্ডেশনের একটি সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এর ফলাফল কতটা গুরুতর হতে পারে। শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে ৩১৪ জনই স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। সাধারণত ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে ট্রমা, পারিবারিক সমস্যা ও নানা কারণে মিথ্যা অভিযোগের প্রভাব থেকে তাদের মধ্যে সমস্যার তৈরি হয়।

এসব সমস্যা সমাধানে পরিবর্তন প্রয়োজন। এই পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ক্লাসরুমে, এমনকি ক্লাসরুমের বাইরেও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে ইতিবাচকতা ও সহযোগিতামূলক অনুভূতি প্রকাশ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বড় ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি প্রকাশ পেলে প্রায়শই তাদেরকে অপমানজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। সার্বিকভাবে এমন পরিস্থিতি তাদের জন্য নেতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করে। সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নিয়মিত ক্যাম্পেইন চালাতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হবে, তেমনি সব শিক্ষার্থী এই সংবেদনশীল বিষয়ে সচেতন হবে।

করণীয় কী?

কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি ঘোষণা দিয়েছেন, ২ লাখ শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিংয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও এটি সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান নাও হতে পারে।

শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সব সমস্যা মন খুলে বলতে অস্বস্তি অনুভব করতে পারে। শুধু তাই নয়, অল্প কিছুদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে এই ধরনের সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত দক্ষ হয়ে ওঠাও সহজ বিষয় নয়। তার বদলে পেশাদার মনোবিজ্ঞানীদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য। এতে করে তারা আরও ভালো ফলাফল পাবে।

সেমিনার ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞদের এসব সেশনে সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে লেকচার দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে।

উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য এই সেমিনারগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব সেমিনারে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো গোপন রাখার কুফল তুলে ধরতে হবে। সেইসঙ্গে পূর্বের কোনো বাস্তব ঘটনা এবং সেই অনুসারে সেগুলো সমাধানের গল্প তুলে ধরা যেতে পারে। এতে করে তারা তাদের সমস্যা প্রকাশে এবং সেগুলো সমাধানে আগ্রহী হবে।

ছোট শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গেই এমন সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে। এতে করে অভিভাবকরা শিশুদেরকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা বুঝতে পারবেন এবং শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন।

তরুণ বয়সের জীবনাবাসন এবং স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাওয়া সবার জন্যই দুঃখজনক। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

ইনকিয়াদ বিন আলী; [email protected]

Comments

The Daily Star  | English

One killed in crude bomb blast during clash at Mohammadpur Geneva Camp

The victim, Zahid, was not involved in the clash and had gone out with friends when he got caught in the middle of the violence, family say

13m ago