স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন: সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আশার আলো

বর্তমানে স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতনে ১৫০ জন শিক্ষার্থী আছে, বেতনভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন ৬ জন। ছবি: সংগৃহীত

স্নাতকোত্তর শেষ করে একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন জাহেদুল আলম; তার স্বপ্ন ছিল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করবেন।

২০১৬ সালে চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামের এক আড্ডায় ৪ বন্ধু - মোহন, সৌভাগ্য, স্বরূপ ও আব্বাসকে এই স্বপ্নের কথা জানান জাহেদুল। তারা নিপীড়িত শিশুদের জন্য একটি স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেন।

সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অগ্রণী ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন ওই ৫ যুবক। সিদ্ধান্ত নেন, তারা প্রত্যেকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে সেখানে জমা করবেন। পরের ৭ মাস ১০০ টাকা করে প্রত্যেকে ব্যাংকে জমা রাখেন তারা।

তবে জাহেদুল ছাড়া বাকি ৪ জন তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে এই উদ্যোগ কিছুটা স্তিমিত হয়ে যায়। কিন্তু থেমে থাকেননি জাহেদুল।

২০১৭ সালে জাহেদুল তার বন্ধু সৌরভ চৌধুরী, জন মোহাম্মদ, রঞ্জন সাহা, সানি চৌধুরী, ঊর্মি বড়ুয়াসহ আরও ১২ জনকে নিয়ে 'অগ্নিবীণা পাঠাগার' নামে একটি গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ শুরু করেন।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, তারা বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরের টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে একটি টিনশেড কাঠামো তৈরি করে 'স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন' প্রতিষ্ঠা করেন।

শুরুর দিকে স্কুলে ৩০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু পড়াশোনা করতো। সেসময় স্কুলে ৩ জন শিক্ষক ছিলেন যারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে স্কুলটিতে ১৫০ জন শিক্ষার্থী আছে, বেতনভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন ৬ জন।

বর্তমানে গ্রন্থাগারের সদস্যদের মাসিক চাঁদা এবং তাদের বন্ধুবান্ধব ও নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে। স্কুলটু ১৮ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের নেতৃত্বে আছেন জাহেদুল।

স্কুলটিতে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দুদিন ছাড়া, প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত পাঠদান চলে।

স্কুলটিতে পাঠদানের পাশাপাশি বিনামূল্যে স্কুলের সামগ্রী, চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।

এছাড়া, শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তারা গত এপ্রিল মাস থেকে একটি 'হলিডে স্কুল' চালু করেন, যেখানে বর্তমানে ৩০ জন শিক্ষার্থী আছেন৷

রিকশাচালক জয়নাল ও তার স্ত্রী, গার্মেন্টসকর্মী ফাতেমা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা খুব খুশি। আমাদের মেয়ে ফারজানা এই স্কুলে পড়াশোনা করছে।'

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ফাতেমা বলেন, 'আমাদের মেয়েকে এমন মানসম্মত স্কুলে পাঠানো আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব হতো না।'

তাদের মতো বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিশুর অভিভাবকরাও স্কুলটির সার্বিক কাজকর্মে সন্তোষ জানান।

বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সৌরভ চৌধুরী বলেন, 'আমরা বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে খুব হতাশ ছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি অন্যরকম স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে।'

'বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা- সাধারণ, মাদ্রাসা ও বৃত্তিমূলক- এটি পুরোপুরি বৈষম্যমূলক। এই শিক্ষাব্যবস্থায় একেক ধরনের মানসিকতা নিয়ে শিশুরা বড় হয়। তাই, আমরা অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য সার্বজনীন শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে স্কুলটি চালু করেছি,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের একটু ভালোবাসা আর সুযোগ তৈরি করে দিলেই সমাজের অন্যান্য মূলধারার শিশুদের সঙ্গে তারাও টিকে থেকে এগিয়ে যেতে পারবে৷'

জাহেদুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিক শিক্ষার পর আমরা এই শিশুদের পরবর্তী শিক্ষা জীবনেরও সমস্ত দায়িত্বও নিতে চাই।'

এজন্য তিনি সমাজের উচ্চবিত্তদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

2h ago