হামলা করেছে ছাত্রলীগ, মামলার আসামি ছাত্রদল-বিএনপি নেতাকর্মী

গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের সশস্ত্র নেতা-কর্মীদের হাতে কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও দেশের অন্যান্য জায়গায় দলীয় কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করতে গিয়ে মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সশস্ত্র নেতা-কর্মীদের হাতে বারবার হামলার শিকার হয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রলীগ লাঠি, লোহার রড এবং চাপাতি নিয়ে ছাত্রদলের ওপর হামলা করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একশরও বেশি আহত হন। যাদের বেশিরভাগই ছাত্রদল কর্মী।

অস্ত্রসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হলেও সরকারপন্থী এই ছাত্র সংগঠনের কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রদলের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। ছবি: সংগৃহীত

তবে বিএনপি ও এর সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

ঢাবি ক্যাম্পাসে মঙ্গলবারের সহিংসতার পর শাহবাগ থানায় দায়ের করা দুটি মামলায় এ পর্যন্ত ৪ জন ছাত্রদল কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ছাত্রলীগের হামলায় কয়েকজন নারী কর্মীসহ ছাত্রদলের প্রায় ৩০ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

বুধবার ঢাবি কর্তৃপক্ষের দায়ের করা একটি মামলা ছাড়াও ঢাবির শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগ ইউনিটের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ১৮ জন ছাত্রদল নেতার নাম উল্লেখসহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় জাহিদ আসামিদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ আনেন।

ঘটনার দুই দিন পর ছাত্রলীগের সশস্ত্র নোত-কর্মীরা হাইকোর্ট এলাকায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর আবারো হামলা করে। এতে একজন সাংবাদিক ও একজন আইনজীবীসহ প্রায় ৫০ জন আহত হন বলে জানা গেছে।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের জন্য ঢাবি ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সেখানে আমরা বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়েছি। এখন আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।'

ঢাবি ক্যাম্পাস এলাকায় ছাত্রদলের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। ছবি: প্রবীর দাশ

তিনি বলেন, 'যারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের কাছে চাপাতি, লাঠি ও অন্যান্য স্থানীয় অস্ত্র ছিল। সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কারা এই হামলা চালিয়েছে তার প্রমাণ আছে। তারপরও পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। এটা স্পষ্ট যে আমাদের হয়রানি করার জন্য এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।'

তবে ঢাবির ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের দাবি, 'সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ছাত্রদলকে প্রতিরোধ করেছে।'

এদিকে ঢাবি এলাকায় হামলার প্রতিবাদে বুধবার রাতে বিজয়নগর এলাকায় মশাল মিছিল করার পর পল্টন থানার পুলিশ ৩০ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ বিএনপি ও ছাত্রদলের ১০০ থেকে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

আসামিদের মধ্যে আছেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ।

হাইকোর্ট এলাকায় ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলা। ছবি: সংগৃহীত

পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ মামলায় আমরা বিএনপির ৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের মধ্যে ৮ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।'

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিএনপির লোকজন সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিল। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং ইটের টুকরা নিক্ষেপ করে। তারা দুই-তিনটি চলন্ত বাসেও হামলা চালায় বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশ বা বাসে এ ধরনের কোনো হামলা তারা দেখেননি।

গতকাল দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় সেই এলাকার এক দোকানদার জানান, বুধবার রাতে তার দোকানের সামনে থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল করেন। তিনি বলেন, 'আমি বিএনপির লোকজনকে পুলিশ বা বাসে কোনো হামলা করতে দেখিনি।'

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পুলিশ মিছিল থেকে বিএনপির কয়েকজনকে আটক করেছে, কিন্তু তিনি কোনো সহিংসতার ঘটনা দেখতে পাননি।

খুলনায় বিএনপি ও ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি আহত হন। ওই ঘটনায় খুলনা শহর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনসহ বিএনপির প্রায় ৮০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

ওই ঘটনার পর খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনসহ বিএনপির অন্তত ৩৭ জনকে আটক করা হয়।

খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক বিশ্বজিৎ কুমার জানান, বৃহস্পতিবার তিনি তুহিনসহ ৯২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৭০৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া এবং পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে ১৪ জনকে আহত করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

খুলনা ছাড়াও ঢাকায় ছাত্রদলের ওপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী ও মানিকগঞ্জেও বিএনপির লোকজন হামলার শিকার হন।

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথমে তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, এখন আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে। কিন্তু তারপরও আমরা আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামব।'

শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঢাবি ক্যাম্পাসে মঙ্গলবারের ঘটনায় তারা ছাত্রদলের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে ২ জনকে বৃহস্পতিবার আটক করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে আগের কিছু মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মো. কামরুজ্জামান বলেন, 'সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হলে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর কোনো হামলা হলে পুলিশ মামলা করতে পারে। এটি একটি সাধারণ নিয়ম।'

অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English
honor smartphone inside

How to build a smartphone

Smartphones feel inevitable in the hand, yet each one begins as a set of drawings, components and hypotheses. The journey from concept to finished device is a carefully sequenced collaboration between design labs, supplier networks and high-throughput assembly lines. In leading electronics hubs across Asia, that journey can take as little as days once a design is frozen and parts are on site.

3h ago