ফিরে দেখা জুলাই গণঅভ্যুত্থান

২৫ জুলাই: ‘মাফিয়া মায়ের মেট্রোশোক’

২৫ জুলাই ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন ঘুরে দেখছেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে উত্তর সিটির তৎকালীন মেয়র আতিকুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

চব্বিশের ২৫ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতের সময় হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হাসিনা। এসময় তাকে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়। তিনি এর জন্য জনগণের কাছে বিচার চান। বলেন, 'বিশ্বাস হতে চায় না এদেশের মানুষ এটা করেছে। কীভাবে এমন দানবিক কাজ করলো?'

ততদিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শত শত মানুষের হতাহত হওয়া নিয়ে একবারও দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি শেখ হাসিনাকে।

এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো স্টেশন দেখে হাসিনার ওই কান্নাকে ভালোভাবে নেয়নি মানুষ। এর প্রতিক্রিয়ায় নানা সমালোচনা ধেয়ে আসে তার দিকে।

কপট বেদনাবোধ বোঝাতে বাংলায় 'মাছের মায়ের পুত্রশোক' শীর্ষক বাগধারাটির বহুল ব্যবহার আছে। ওই আলোকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক, চিন্তক সেলিম রেজা নিউটন হাসিনার এ কান্নাকে তখন বর্ণনা করেন 'মাফিয়া মায়ের মেট্রোশোক' বলে।

সেইসঙ্গে হাসিনার ওই ভূমিকাকে 'নাটক' আখ্যা দেন অনেকে। কান্নারত শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে বানানো মিম ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যার ক্যাপশন ছিল 'নাটক কম কর পিও'।

র‍্যাটস আসিফ নামের একজন শিল্পীর আঁকা জনপ্রিয় কার্টুন ‘নাটক কম করো পিও!’ কার্টুন বিদ্রোহ প্রদর্শনী থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

সহিংসতার ভিডিও, ছবি যাচাই করে অ্যামনেস্টির উদ্বেগ

২৫ জুলাই পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করে, বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ছয় দিনের যোগাযোগ বিধিনিষেধের মধ্যেও কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে বল প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া তিনটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রাণঘাতী ও মৃদু প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ডিরেক্টর ডেপ্রোজ মুচেনা বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে আসা ভিডিও এবং ছবির ক্রমাগত যাচাই ও বিশ্লেষণে সেখানকার এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের ভয়াবহ মানবাধিকার রেকর্ড এবং বিক্ষোভ দমনে মোতায়েন করা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কর্মকাণ্ডে আশ্বস্ত হওয়া যায় না যে ইন্টারনেট বন্ধ করে (যেটি এখনো আংশিক বহাল আছে) আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অনুপস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।'

একইসঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর সংখ্যাসহ নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার তাগিদ দেয় সংস্থাটি।

২১ বেওয়ারিশ লাশ দাফন

সেদিন বৃহস্পতিবার কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সংঘর্ষে নিহতসহ ২১ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।

ঢাকার তিনটি সরকারি হাসপাতাল থেকে আনা এ লাশগুলো পুলিশ তাদের দাফন করতে দেয়।

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কর্মকর্তারা ২৫ জুলাই জানান, তিনদিনে তাদের কাঝে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মোট ১৮টি বেওয়ারিশ লাশ পাঠানো হয়। এর মধ্যে ২২শে জুলাই নয় জনের এবং ২৪শে জুলাই আরও নয় জনের লাশ দাফনের জন্য পাঠানো হয়।

ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের মর্গের ডোম রামু চন্দ্র দাস সেদিন জানান, ২৪ জুলাই যে লাশ পাঠানো হয়েছিল তাদের কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ছিল, আর কয়েকজনের শরীরে মারাত্মক জখমের আঘাত ছিল। পিটিয়ে মারলে যে রকম হয়, সে রকম আঘাত ছিল কয়েকজনের পিঠে।

এ্যানি, পার্থ গ্রেপ্তার

২৫ জুলাই ভোরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে রাজধানীর এলিফেন্ট রোড থেকে এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থকে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগের মামলায় পার্থকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।

নরসিংদী কারগার থেকে পালানো ৩৮৯ বন্দির আত্মসমর্পণ

নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে ৩৮৯ জন আত্মসমর্পণ করে ২৫ জুলাই।

এছাড়া পলাতক নয় জঙ্গি সদস্যের মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই একদল মানুষ নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-অগ্নিসংযোগ করে।

এসময় তারা কারাগারের ভেতরের সেলগুলোর তালা ভেঙে দিলে 'নয় জঙ্গি' সদস্যসহ ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যায়।

নাহিদের বিবৃতি

২৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কোটা সংস্কারের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটিকে তারা চূড়ান্ত সমাধান মনে করছেন না। যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে নীতিনির্ধারণী জায়গায় সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে।

এ ছাড়া কোটা সংস্কারের বিষয়ে সংসদে এখনো আইন পাস করা হয়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়,  কোটা সমস্যার এখনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি।

নাহিদের এই বিবৃতিটি ফেসবুকে পোস্ট করেন আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও সহসমন্বয়ক রিফাত রশীদ।

 

Comments

The Daily Star  | English

Water lily tug-of-war continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June..Despite several exchanges of letters and multiple meetings between NCP and the chief election commissioner, other

2h ago