সরকারি খাদ্য মজুদ ১৮ মাসে সর্বোচ্চ

খাদ্যশস্য মজুদ
গাইবান্ধায় সরকারি গুদাম। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

বেশি পরিমাণে শস্য সংগ্রহের পাশাপাশি আমদানি ও বিতরণ কমে যাওয়ায় চলতি জুলাইয়ে দেশের সরকারি খাদ্য মজুদ গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে।

বিশ্লেষকরা এই মজুদকে ভালো লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। কারণ, এটি যেকোনো আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়ক হবে। পর্যাপ্ত মজুদের কারণে মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে সরকার বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে বলেও মনে করছেন তারা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ২৩ জুলাই সরকারি গুদামে চাল ও গমের মজুদ ছিল ১৯ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। এটি ২০২২ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সরকারি খাদ্য মজুদ ছিল ১৯ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন, যা সর্বোচ্চ রেকর্ড।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমন ও বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। খাদ্যশস্য সংগ্রহও এখন পর্যন্ত ভালো হয়েছে।'

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বোরো উৎপাদনের প্রাক্কলন এখনো প্রকাশ করেনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বোরো মৌসুমের ধানের হিসাব ধরলে চলতি বছরে মোট উৎপাদন ৫ শতাংশ বেড়ে ৪ কোটি টন হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, এবার বোরোর ফলন হয়েছে ২ কোটি ১৮ লাখ টন, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি।

খাদ্য অধিদপ্তর মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কৃষকদের কাছ থেকে বোরো ধান ও চাল কেনা শুরু করে। এ পর্যন্ত স্থানীয় বাজারগুলো থেকে ১০ লাখ ১৩ হাজার টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তর ১৫ লাখ ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আগস্ট পর্যন্ত শস্য কেনা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের বৃহত্তম ফসল বোরো। এটি দেশের বার্ষিক মোট ধান উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি।

সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, 'আমরা বোরো কেনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে আছি। তবে বিষয় এগুলো রাখবো কোথায়?'

খাদ্য অধিদপ্তরের ২১ লাখ টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ক্ষমতা আছে। সরকারি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির (পিএফডিএস) আওতায় খাদ্যশস্য সরবরাহ ৩ মাসের সমপরিমাণ শস্য নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

এর ফলে সরকারি গুদামের কিছু জায়গা খালি হবে বলে জানান তিনি।

খাদ্যশস্যের বিতরণ কমে যাওয়া মজুদ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ। খাদ্য মন্ত্রণালয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৮ হাজার টন খাদ্যশস্য বিতরণ করেছে। এটি আগের বছরেও প্রায় একই পরিমাণ ছিল।

চলতি অর্থবছরের ১৩ জুলাই পর্যন্ত মোট খাদ্যশস্য বিতরণ হয়েছে ৩৩ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন। গত বছরের একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১২ হাজার টন।

খাদ্য অধিদপ্তরের মজুদ ও গুদাম বিভাগের পরিচালক মো. জামাল হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, অন্যান্য খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির পাশাপাশি ন্যায্যমূল্যের কার্ডের আওতায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আগামী সেপ্টেম্বর শুরু হবে।

৩ মাসে সাড়ে ৪ লাখ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'খাদ্যশস্যের বর্তমান মজুদ কিছুটা স্বস্তি দেবে।'

সরকারি গুদামে খাদ্য মজুদের বর্তমান পরিমাণ সরকার নির্ধারিত ১৩ লাখ টনের চেয়ে বেশি উল্লেখ করে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাখাওয়াত বলেন, 'আমরা আরও বেশি খাদ্যশস্য মজুদে রাখার পরিকল্পনা করছি।'

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাবুদ্দীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে মজুদের পরিমাণ সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলোর আওতায় খাদ্যশস্য বিতরণের জন্য ভালো অবস্থায় আছে।'

তার মতে, বাসমতী নয় এমন সাদা চাল রপ্তানির ওপর ভারত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সরকারের উচিত চাল আমদানির বিকল্প দেশ খোঁজা, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমন উত্পাদন কমে গেলে তা পূরণে দ্রুত চাল কেনা যায়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'সামগ্রিক উৎপাদনের তুলনায় চালের ওপর বাংলাদেশের আমদানি নির্ভরতা কম।'

তিনি আরও বলেন, 'ভারতের চাল রপ্তানির ওপর সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা দেশীয় চালের বাজারে প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। তবে দেশের প্রধান ফসল ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ব্যবস্থা নিতে হবে।'

'সরকারি খাদ্য মজুদের দিক থেকে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। আগামী ৩ মাসের মধ্যে আমরা আরও একটি ফসল পাব। তবে সরকারের উচিত নিবিড়ভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করা, যাতে বাজার সংশ্লিষ্টরা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নিতে পারে।" যোগ করেন তিনি।

বাকৃবির ইনস্টিটিউট অব এগ্রিবিজনেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ইসমত আরা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খাদ্যশস্যের মজুদ যথেষ্ট পরিমাণে আছে। সরকার পিএফডিএসের আওতায় খাদ্যশস্য বিতরণ করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না।'

Comments

The Daily Star  | English
Taka vs us dollar in Bangladesh

US dollar rises against taka

The American greenback was sold for as high as Tk 122.75 today, up from a high of Tk 122.30 last week

32m ago