ভরা মৌসুমেও আলুর দাম চড়া কেন

আলুর দাম
স্টার ফাইল ফটো/রাশেদ সুমন

উৎপাদন ও সরবরাহ কমে যাওয়া এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ির বেশি মুনাফার প্রবণতার কারণে চলতি মৌসুমে আগের তুলনায় ভরা মৌসুমে আলুর দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি।

গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে ঘূর্ণিঝড় 'মিগজাউম'র কারণে এ দেশে টানা বৃষ্টির ফলে দেশে আলুর চাষাবাদ বিঘ্নিত হয়। পাশাপাশি ছত্রাকজনিত রোগ 'লেট ব্লাইট' দেশে আলু চাষে বিঘ্ন ঘটায়।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র ও ব্যবসায়ীদের মতে, মৌসুমের শুরুতেই বাজারে চাহিদা অনুযায়ী আলুর সরবরাহ কম।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, রোববার রাজধানীর কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। এক বছর আগে তা ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা।

গত এক মাসে আলুর খুচরা দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এক বছর আগের তুলনায় তা ৪৯ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।

ঢাকার অন্যতম বড় কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ মনসুর আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ৪০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, 'চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। চাষিরাও দাম বাড়িয়েছেন। তাই ভরা মৌসুমেও আলুর দাম বেশি।'

গত ৩৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে আলুর ব্যবসা করা আলী আরও বলেন, 'মৌসুমে বাজারে আলুর এতো দাম আগে কখনো দেখিনি।'

দিনাজপুর সদর উপজেলার কৃষক সাদেক আলী এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। তিনি জানান, 'লেট ব্লাইট' রোগে তার খেতে আলুর উৎপাদন কমেছে। 'এ রোগের কারণে উৎপাদন ৩০ শতাংশ কম হয়েছে,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ সালে একই উপজেলার অপর কৃষক নুর ইসলাম নয় টাকা থেকে ১০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছিলেন। এ বছর তা বিক্রি করছেন ২১ টাকায়। অর্থাৎ দ্বিগুণ দামে। তিনি দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মতিয়ার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আলুর বীজ বপনের সময় ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম আঘাত হানে। অনেক কৃষক তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেননি।'

এ ছাড়া, সরবরাহ সংকটের কারণে অনেক কৃষক মৌসুম শুরুর আগেই অপরিপক্ব আলু বিক্রি করে দেন। ফলে মূল উৎপাদন কমে গেছে বলে জানান তিনি।

এদিকে আগামীতে আলুর দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

দেশে হিমাগার আছে ৩৮৫টি। এর মধ্যে সমিতির সদস্য ১৯২ জন।

তার হিসাবে, সমিতির সদস্যদের ১৬ লাখ টন পণ্য মজুদ আছে। সদস্য নন এমন ব্যবসায়ীদের পণ্য মজুদ আছে প্রায় ১০ লাখ টন।

তিনি জানান, প্রায় ৪০ শতাংশ আলু 'বীজ' হিসেবে, পাঁচ শতাংশ চিপস ও বাকিটা সরাসরি খাওয়ার জন্য পাওয়া যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, এ বছর চার লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ফসল তোলার মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে।

রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক কোটি ১৬ লাখ টন আলু উৎপাদন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিস উইংয়ের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৯০ লাখ টন।'

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, আলুর বার্ষিক চাহিদা ৭৫ লাখ থেকে ৮০ লাখ টন।

'বাজারে আলুর সংকট নেই' দাবি করে পাটোয়ারী আরও বলেন, 'একদল কৃষকের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতা আলুর দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।'

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। দামের লাগাম টানতে উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে 'যৌক্তিক দাম' বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

তবে, এসব উদ্যোগে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়নি। এ কারণে সরকার গত অক্টোবরে আলু আমদানির অনুমতি দেয়। তারপরও বাজারে আলু দাম বেশি।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টন আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে, এ পর্যন্ত আনা হয়েছে ৮৬ হাজার ৮৫১ টন।

কৃষি বিপণন বিভাগের মহাপরিচালক মাসুদ করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী আলু আমদানি করলে দাম কমবে। দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি।'

ভরা মৌসুমে আলুর দাম বেশি হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা, বলে জানান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, 'আলুর দাম নিয়ে মঙ্গলবার মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠক আছে। সভা থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body being taken to Manik Mia Avenue for janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago

Farewell

10h ago