শুল্ক বৃদ্ধিতে বেড়েছে আমদানিকৃত ফলের দাম

আপেল, আঙুর ও তরমুজের মতো কিছু টাটকা ফল ও জুসের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার
আপেল, আঙুর ও তরমুজের মতো কিছু টাটকা ফল ও জুসের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

সম্প্রতি সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ প্রভাব পরেছে আমদানিকৃত ফলের দামে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপের পর দাম বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই অনেকে আমদানিকৃত ফল বাদ দিয়েছিলেন তাদের ক্রয় তালিকা থেকে।

গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুকনো ও টাটকা ফল আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করেছে।

আপেল, আঙুর ও তরমুজের মতো কিছু টাটকা ফল ও জুসের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্ত পূরণের জন্য রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা হিসেবে।

প্রায় দুই বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। এমন সময়ে শুল্ক বৃদ্ধির তীব্র সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

ক্রেতারা বলছেন, আপেল, কমলা, মালটা, আঙুরের মতো ফল কিনতে গেলে আগের চেয়ে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি চাইছেন বিক্রেতারা। যার কারণে তাদেরকে আগের চেয়ে আরও কম পরিমাণে কিনতে হচ্ছে মাসের খরচ মেলাতে।

কারওয়ান বাজারে আসা এক ক্রেতা নাজনীন আখতার বলেন, 'আগে যে পরিমাণে ফল কিনতে পারতাম, এখন আর সেটা পারি না। এখন যে অবস্থা হচ্ছে, সামনে হয়তো আর এসব বিদেশি ফল খেতে পারব বলে মনে হয় না।'

তিনি বলেন, '১০ দিন আগে মাঝারি আকারের কমলার কিনেছি প্রতি কেজি ২৬০ টাকা করে, যা এখন ২৯০ টাকা। ২৯০ টাকা কেজির আপেলের দামও বেড়ে হয়েছে ৩২০ টাকা।'

তিনি আরও বলেন, '২ কেজি কমলা ও ২ কেজি আপেল কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দের কেজি করে নিতে হলো।'

ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে শুল্ক কমাতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান নাজনীন।

ফল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এর আগে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আমদানি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। সম্প্রতি সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে পাইকারি বিক্রি আরও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমেছে।

ফল
দাম বেশি হলেও ফলের দোকানগুলোতে ভিড়ের কমতি নেই। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

কারওয়ান বাজারের দোকান মালিক মোহাম্মদ সাগর মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ফলে ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়েছে। তবে, কিছু ফলের দাম কেজিতে ২৫ টাকারও বেশি বেড়েছে।'

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'আগে কালো আঙুর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৫০০ টাকায় কিনতাম, এখন কিনি ৫৩০ টাকায়। ছোট ডালিম ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮০ টাকা হয়েছে। ২৭০-২৮০ টাকার নাশপতি পাইকারি বাজারে ২৮৮ টাকা হয়ে গেছে।'

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা এক মাস আগে সরকারের কাছে নিয়ন্ত্রক শুল্ক প্রত্যাহার ও অগ্রিম আয়কর কমানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'রমজান শুরুর আগেই এই শুল্ক কমানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। কারণ, রোজায় মানুষ ফল খায় বেশি।'

তিনি আরও বলেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত দুই বছর ধরে মানুষ ফল কম কিনছে। এখন আবার শুল্ক বাড়লো। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা তো আরও সমস্যায় পড়বে।'

এলসি খোলার তথ্য থেকে জানা যায়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় জুলাই-নভেম্বরে বাংলাদেশে ফল আমদানি সাড়ে ৮ শতাংশ কমে ১০৭ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে এলসির নিষ্পত্তির পরিমাণও কমেছে।

রমজান মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি কার্যকর না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তারা সতর্ক করেছে, অন্যথায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর আর্থিক সংকট আরও তীব্র হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

Crowds spilled over into surrounding areas, with large gatherings seen in Farmgate, Karwan Bazar and nearby localities

2h ago