চীনে আম রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে: ইপিবি

ইপিবি ভাইস-চেয়ারম্যান আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিদর্শন করেন। ছবি: সংগৃহীত

চীন সরকারের আগ্রহে দেশটিতে আম রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ।

আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য জানিয়েছে।

আম উৎপাদন ও রপ্তানি উন্নয়নে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফর করেছেন। 

এ সময় তিনি রপ্তানিযোগ্য আমের বাগান পরিদর্শন, স্থানীয় উৎপাদকদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তথ্য নেন ও এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় করেন। 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত সভায় তিনি আম উৎপাদক, রপ্তানিকারক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইপিবি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তাজা ফলের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৭৭৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিভিন্ন দেশ থেকে ৫০০-১০০০ জাতের আম রপ্তানি হয়। 

আমের আন্তর্জাতিক বাজারের আকার ২০২৪ সালের ৬৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ৭১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। 

বাজার গবেষণা বলছে, বার্ষিক ৮ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে ২০২৯ সালে বাজারটি ৯৭ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।

বাংলাদেশে উৎপাদিত রপ্তানিযোগ্য আমের মধ্যে ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর, খিরসাপাত, বারি-২, বারি-৩, বারি-৭ ও আশ্বিনা জাতের আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। 

দেশি জাত ছাড়া এখন কাটিমন, তোতাপুরী, ন্যাম ডক মাই, মিয়াজাকি, অ্যালফ্যানসো, কেইট, পালমার ইত্যাদি বিদেশি জাতের আমও দেশে সীমিত আকারে চাষ করে সাফল্য পাওয়া গেছে।

ইপিবি জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ দশমিক ২৯ লাখ হেক্টর জমিতে ২৩ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন আমের ফলন হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৭ লাখ মেট্রিক টন। 

২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ দশমিক ৫ লাখ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয় এবং উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ৮৯ লাখ মেট্রিক টন। 

আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে যথাক্রমে সপ্তম, দ্বিতীয় ও অষ্টম। আর মৌসুমী ফল উৎপাদনে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান দশম। 

আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে ফল চাষের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১০ বছরে দেশে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। 

বর্তমানে কাঁচা আম ফালি বা আমচুর, চাটনি, মোরব্বা এবং পাকা আম থেকে জুস, ফ্রুটবার, পুডিং, আমসত্ত্ব, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমের ফালি শুকিয়ে প্যাকেটজাত করে রপ্তানির প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমের বেশ কয়েকটি প্রজাতি ইতোমধ্যেই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যেমন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি, নওগাঁর নাক ফজলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা ও রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা। 

বাংলাদেশ থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, হংকং, কানাডা, বাহরাইন, সুইজারল্যান্ড, ইতালি ও সুইডেনে আম রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে সর্বাধিক রপ্তানি হয়েছে। 

আম উৎপাদনে শীর্ষ দেশগুলো হচ্ছে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, মেক্সিকো, বাংলাদেশ, ব্রাজিল ও নাইজেরিয়া। আবার আম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, পেরু, নেদারল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, স্পেন ও ইকুয়েডর।

ইপিবি জানিয়েছে, চীনা সরকারের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশে আম রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত স্থানীয় আম উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের তালিকা নির্ধারিত ফরমে চীনা দূতাবাসে ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে। সে দেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আমের শেলফ লাইফ বৃদ্ধিকরণ, পর্যাপ্ত হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সুবিধা তৈরিকরণ, রাসায়নিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, উন্নতমানের প্যাকেজিং, দেশের বাণিজ্যিক আম উৎপাদকদের একটি অভিন্ন ছাতার আওতায় আনা, ফ্রুট ফ্লাইয়ের উপদ্রব কমানো, উত্তম কৃষি চর্চার যথাযথ অনুসরণ, স্যানিটারি ও ফাইটো-স্যানিটারি বিষয়ে প্রশিক্ষণ, কুল চেইন বজায় রাখা ইত্যাদি বিষয়ে যত দ্রুত অগ্রগতি হবে, তত দ্রুত আমাদের দেশের আমের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে ইপিবি। 

রপ্তানি প্রসারে এসব কার্যক্রমে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো কাজ করবে বলে আম উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের আশ্বস্ত করা হয়। 

আজকের মতবিনিময় সভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের পক্ষ থেকে কৃষিভিত্তিক একটি ইপিজেড স্থাপন, আম নীতিমালা প্রণয়ন, বাগানসমূহে সোলার প্যানেল স্থাপন, আম উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের ঋণদান জোরদারকরণ, প্রান্তিক পর্যায়ে কোয়ারেন্টাইন সুবিধা, রাজশাহী হতে আম সরাসরি বিমানে জাহাজীকরণ, প্যাকিং হাউজ সুবিধা স্থাপনের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ঢাকায় একটি আমের মেলা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। 

ইপিবি ভাইস-চেয়ারম্যান চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত রেশম শিল্প ও হস্তশিল্প পরিদর্শন করেন এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ খবর নেন। 

Comments

The Daily Star  | English

Victory day today: A nation born out of blood and grit

The tide of war had turned by mid-December in 1971. The promise of freedom was no longer a dream. It had hardened into tangible certainty.

10h ago