ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কা কীভাবে সামলাবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব
স্টার ফাইল ফটো

ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করলেও দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে এখনো শক্তিশালী সম্ভাবনা দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির সিংহভাগই পোশাক পণ্য। ফলে নতুন এই শুল্ক কাঠামোর অধীনে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। তবে বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশ এখনো এ বিষয়ে আশাবাদী থাকতে পারে।

বাংলাদেশ সাধারণ ও মধ্যম মানের পোশাক উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এসব পণ্যের দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় বর্তমানে অন্য কোনো দেশ এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমকক্ষ নয়। আমেরিকান খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো এত কম দামে এসব পণ্য কেনে যে, তারা ৩৫ শতাংশ শুল্কের বোঝা বহন করেও মুনাফা করতে পারবে।

উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ থেকে ৫ ডলারে কেনা একটি টি-শার্ট মার্কিন খুচরা বাজারে সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ ডলারে বিক্রি হয়। বাড়তি শুল্ক যোগ হলেও ক্রেতারা পণ্যের দাম সামান্য বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারে, যা সেখানকার ভোক্তাদের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না। কারণ, শুল্কের বোঝা মূলত আমদানিকারকের ওপর পড়ে, বাংলাদেশি সরবরাহকারীর ওপর নয়। ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে বিশাল ফারাক থাকায় মার্কিন ব্যবয়সায়ীরা শুল্ক পরিশোধের পরও মুনাফায় থাকবেন। ফলে তারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনাও অব্যাহত রাখবেন।

গত ২ এপ্রিল শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর থেকে সরবরাহকারী, কাপড় প্রস্তুতকারক এবং খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে শুল্কের খরচ ভাগাভাগির একটি নতুন মডেল তৈরি হয়েছে। এখন প্রতিটি পক্ষই শুল্কের বোঝার একটি অংশ বহন করছে, ফলে পুরো চাপ সরবরাহ শৃঙ্খলের কোনো একটি অংশের ওপর পড়ছে না।

ট্রাম্প ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে চীনের পণ্য ভিয়েতনাম হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কৌশল বন্ধ করতে, সে দেশ থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট হওয়া পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশের মতো চড়া শুল্ক রয়েছে, যা বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্কের চেয়েও বেশি। ফলে, যেসব ক্রেতা উচ্চ শুল্ক ও ট্রান্সশিপমেন্টের ঝুঁকি এড়াতে চান, তারা বাংলাদেশ থেকেই পণ্য কিনতে আগ্রহী হবেন। চীনের বাজার হারানোর সম্ভাবনাও বাংলাদেশের জন্য নতুন ক্রয়াদেশ নিয়ে আসতে পারে, কারণ এরই মধ্যে প্রায় পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে আছে ভিয়েতনাম।

অন্যদিকে, ভারত আলোচনার মাধ্যমে যদি শুল্কছাড় পায়ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের চাহিদা মেটানোর সক্ষমতা তাদের নেই। তৈরি পোশাক উৎপাদন সক্ষমতা তৈরিতে কয়েক বছর সময় লাগে। ভারতে পর্যাপ্ত তুলা এবং শ্রমশক্তি থাকা সত্ত্বেও এক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতি ধীর।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি এবং ৬.৯০ শতাংশ বাজার অংশীদারিত্ব নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। অন্যদিকে, ভারতের অবস্থান পঞ্চম। পর্যাপ্ত তুলা ও অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান এ তালিকায় অনেক পিছিয়ে।

দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তুরস্ক এবং ভারতের মতো দেশগুলোতে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় তারা বৈশ্বিক ক্রেতাদের কাছে কম আকর্ষণীয়। অন্যদিকে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং দক্ষ শ্রমিকের অভাবে মিয়ানমার ও ইথিওপিয়ার মতো দেশগুলো পোশাক খাতে প্রবেশের চেষ্টা করে সফল হতে পারেনি। এটি একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।

বৈশ্বিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের রপ্তানি বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি ২৯ শতাংশ বেড়ে ২.৯৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে (২০২০-২০২৪) যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪০.৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশকে অবকাঠামো সুবিধা উন্নত করতে হবে। পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন এবং কম সময়ে পণ্য পাঠাতে উন্নত বন্দর ব্যবস্থাপনা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সমন্বিত লজিস্টিকস নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

এদিক থেকে উন্নতি করা গেলে বাংলাদেশ মার্কিন শুল্কের প্রভাব মোকাবিলা করে বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক বাজারে নিজেদের অংশীদারিত্ব বাড়াতে পারবে। ফলে, আশা করা যায় ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ধারা অব্যাহত থাকবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

US tariff at 20% 'satisfactory', says Khosru

Will comment after knowing full details of the deal

1h ago