যুক্তরাষ্ট্রে ১.২৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি কমতে পারে বাংলাদেশের: র‍্যাপিড

যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি আরোপিত ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কারণে আগামী এক বছরে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এতে রপ্তানি আয় কমতে পারে প্রায় ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড)-এর এক গবেষণায় এই আভাস দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন পাল্টা শুল্ক ও এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রভাব নিয়ে গতকাল ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এক কর্মশালায় র‍্যাপিডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শুধু পোশাক খাত থেকেই রপ্তানি কমতে পারে প্রায় ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার।

আব্দুর রাজ্জাক উল্লেখ করেন, অন্যান্য কয়েকটি দেশের তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতি কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, 'সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি ১০ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে এবং এই সংকুচিত বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা খুব কঠিন হবে।'

তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগী ভারত ও চীনের চেয়ে বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক কম হলেও রপ্তানি বাড়ানো কঠিন হবে।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা বাড়লেও পারলেও সার্বিকভাবে বাজারের আকার সংকুচিত হওয়ায় তা সামগ্রিক রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক না-ও হতে পারে।'

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের কারণে অন্যান্য দেশ থেকেও রপ্তানি কমবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ৫৮ শতাংশ, ভারতের ৪৮ শতাংশ, ভিয়েতনামের ২৮ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার ২৭ শতাংশ কমতে পারে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে পারে, যার মাধ্যমে তাদের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ কমে যায়, তাহলে পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য আরও প্রতিকূল হতে পারে। 'সেক্ষেত্রে, বাংলাদেশের রপ্তানি ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারতের রপ্তানি হ্রাস পেয়ে ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশে দাঁড়াবে।'

যুক্তরাষ্ট্র একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় গন্তব্য। মার্কিন বাজারে পাঠানো পণ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পোশাক। বাংলাদেশ প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে আট বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করে এবং আমদানি করে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য। চীন ও ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। দেশটির ৮১ বিলিয়ন ডলারের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের অংশ ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় বাজারগুলোতেও পণ্যের দাম কমে যেতে পারে।

রাজ্জাকের মতে, দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করবে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতি, সম্ভাব্য নীতি পরিবর্তন এবং পরিবর্তিত বাণিজ্য পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের নিজস্ব সক্ষমতা। তিনি বলেন, 'শুল্ক যদিও আরও বেশি হতে পারত, তবুও আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। এগিয়ে যাওয়ার জন্য কৌশলগত নীতি গ্রহণ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং রপ্তানি বাজারের বহুমুখীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।'

এদিকে, ঢাকা সফররত একটি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল দ্রুত শ্রম আইন সংস্কার এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এটা সম্ভব হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক আরও কমবে।

গতকাল ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রতিনিধিদলটি এই আহ্বান জানায়।

বিজিএমইএ নেতারা মার্কিন বাজারে পোশাক রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে শুল্ক আরও কমানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body being taken to Manik Mia Avenue for janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago

Farewell

10h ago