এলডিসি পরবর্তী সময়ের জন্য বেসরকারি খাতকে প্রস্তুতির আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার

এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের পর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতার জন্য দেশের বেসরকারি খাতকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ডিএইচএল-দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত ২৩তম বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আগত ব্যাবসায়ীদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, 'আপনাদের প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব থাকতে হবে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি স্থানীয় বাস্তবতাও বিবেচনা করতে হবে। নীতিগত সংস্কার, প্রক্রিয়াগত সরলীকরণ এবং অন্যান্য সহায়তার মাধ্যমে আমরা অবশ্যই আপনাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব।'
বেসরকারি খাতে চাকরির বাজার তৈরি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'শুধু সরকারি সম্পদ দিয়ে প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।'

ব্যবসায়ীরা দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে 'অসাধারণ সক্ষমতা' দেখিয়েছেন উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'তাদের পারফরম্যান্স সত্যিই ভালো। বাংলাদেশের ব্যবসা এখন শুধু দেশীয় নয়—এটি বৈশ্বিকও, কারণ আমাদের পণ্য বিশ্বের নানা দেশে যাচ্ছে, আমাদের সেবা পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে।'
উদাহরণ হিসেবে তিনি ফিজির দোকানে প্রানের চানাচুর দেখে 'আনন্দিত ও বিস্মিত' হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। 'এভাবেই বাংলাদেশ পৌঁছে যায় দূর-দূরান্তে। এর কৃতিত্ব স্থানীয় উদ্যোক্তাদের,' যোগ করেন তিনি।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সরকারকে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি আর্থিক চাপের ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। অনেকে আমাকে বিভিন্ন ধরনের অনুরোধ করেন—কর আরোপ করতে, কর কমাতে, নগদ প্রণোদনা বাড়াতে। যদি আমি সব করে ফেলি, তাহলে সীমিত সম্পদের কারণে আমরা সমস্যায় পড়ব। কিন্তু আমাদের অবশ্যই ব্যবসাবান্ধব হতে হবে।'
তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাষ্ট্র নয় বরং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই হবে কর্মসংস্থানের মূল চালিকাশক্তি।
'সরকার কিছু ক্ষেত্র ছাড়া চাকরি সৃষ্টি করতে পারে না। কর্মসংস্থানে সত্যিকারের গতি আনবে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন,' বলেন তিনি।
সাম্প্রতিক এক বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স শেভরন, মেটলাইফের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের লেনদেনের নিষ্পত্তির দক্ষতা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তারা খুবই খুশি। আর এই কৃতিত্ব আপনাদের।'
বাংলাদেশকে নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন বলেন, 'বাংলাদেশ এখন সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।'
তবে সতর্ক করে তিনি বলেন, 'ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতিবিদরা যেন সংস্কারের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।'
বক্তব্যের শেষদিকে তিনি সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করুন, আমরা অবশ্যই আপনাদের সর্বদা সহায়তা করার চেষ্টা করব।'
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
এবারের আয়োজনে বর্ষসেরা ব্যবসায়ী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, বর্ষসেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে সিটি ব্যাংক, বর্ষসেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্যবসায় অসামান্য কৃতিত্ব অর্জনকারী নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন শেয়ারট্রিপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া হক এবং আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলাকে।
Comments