বৃষ্টির পানি ও নতুন প্রযুক্তিতে পোশাক কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমছে

পরিবেশগত উদ্বেগ ও বৈশ্বিক পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর চাপে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের পোশাক কারখানাগুলো বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং উন্নত ধোয়া ও রঙ করার প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) প্যাক্ট কর্মসূচি অনুযায়ী, ৩৩৮টিরও বেশি বাংলাদেশি কারখানা আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে প্রতি বছর ২ কোটি ৫০ লাখ ঘনমিটার মিঠা পানির ব্যবহার ও ২ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্যপানি নিঃসরণ কমিয়েছে।
এক দশক আগে এক কেজি ডেনিম কাপড় ধোয়াতে প্রায় ২০০ লিটার ভূগর্ভস্থ পানি লাগত। শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে এ হার নেমে এসেছে ৫০-৫৩ লিটারে।
তাদের মতে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এই পরিমাণ আরও কমিয়ে ২৫-৩০ লিটার পর্যন্ত আনা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো সরবরাহ চেইনজুড়ে পানির ব্যবহার কমানোর দাবি জানাচ্ছে।
এদিকে, অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে দেশের কিছু অঞ্চলে প্রতি বছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রায় তিন মিটার করে নিচে নেমে যাওয়ায় স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকরাও দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে এগোচ্ছেন।
বর্তমানে কারখানাগুলো সংগৃহীত বৃষ্টির পানি ব্যবহার করছে টয়লেট ফ্লাশের মতো ছোট কাজে। তবে কাপড় ধোয়া ও রঙ করার জন্য এখনও বিশুদ্ধ পানি প্রয়োজন। তারপরও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার এ উদ্যোগ ভূগর্ভস্থ পানির মোট ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, নারায়ণগঞ্জভিত্তিক ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড নতুন প্রযুক্তি ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালুর পর এখন এক কেজি কাপড় ধোয়াতে ৬৫-৬৮ লিটার পানি ব্যবহার করছে বলে জানান কোম্পানির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা বখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, 'বর্তমানে কোম্পানির মোট পানির চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশই মেটাচ্ছে বৃষ্টির পানি।'
তিনি জানান, ক্রেতারা কাপড় ধোয়া ও রঙ করার ক্ষেত্রে আরও পানি সাশ্রয়ের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি উন্নত প্রযুক্তি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।
অপারেশনস ডিরেক্টর সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, স্কয়ার টেক্সটাইলসও পানির ব্যবহার কমিয়েছে। কয়েক বছর আগে যেখানে এক কেজি ডেনিম কাপড় ধোয়াতে ৭০-৮০ লিটার পানি লাগত, এখন তা নেমে এসেছে ৫৩ লিটারে। এক সময় কোম্পানিটি এক কেজি কাপড় ধোয়াতে ১২০-১৫০ লিটার পর্যন্ত পানি ব্যবহার করত।
তিনি বলেন, 'আমাদের হবিগঞ্জ কারখানায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানির পুনঃব্যবহার ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের কারণেও মোট পানি খরচ কমেছে।'
দেশের অন্যতম সবুজ কারখানা প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেড প্রায় ৪০ শতাংশ পানি সাশ্রয় করছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে। তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক জানান, সংগৃহীত বৃষ্টির পানি সরাসরি ধোয়া ও রঙ করার কাজে ব্যবহার করা যায় না।
তিনি বলেন, 'উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এক কেজি কাপড় ধোয়াতে পানির ব্যবহার ২০ লিটার পর্যন্ত নামিয়ে আনা সম্ভব।'
৩৬০ সল্যুশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনন্ত আহমেদের মতে, বাংলাদেশের সবুজ কারখানাগুলো বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রায় ৪০ শতাংশ পানি সাশ্রয় করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, 'কিছু ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাপড় ধোয়া ও রঙ করার কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।'
অনন্ত আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের একজন সদস্য, যারা 'লিড' প্রোগ্রামের আওতায় সবুজ কারখানাগুলোকে সনদ দেয়।
টেকসই পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক নেতৃত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশে বর্তমানে ২৬৩টি 'লিড' সনদপ্রাপ্ত কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১১১টি প্লাটিনাম ও ১৩৩টি গোল্ড মানের।
এ ছাড়া, বিশ্বের শীর্ষ ১০০ উচ্চ রেটেড 'লিড' কারখানার মধ্যে ৬৮টি বাংলাদেশে অবস্থিত।
Comments