ই-কমার্স কেলেঙ্কারি: আজও টাকা ফেরত পাওয়ার আসায় বহু গ্রাহক

দেশে ই-কমার্স কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর কেটে গেছে প্রায় চার বছর। আজও হাজারো গ্রাহক তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এসব অর্থের মধ্যে ৫৮ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে।

২০২০ সালে করোনা মহামারীর লকডাউনের সময় বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় অনলাইন শপিং। সেই সুযোগে ইঅরেঞ্জ, ইভ্যালি, কিউকম ও আলেশা মার্টের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অগ্রিম অর্থ নেয় কম দামে পণ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।

পরিবর্তে জানা যায়, তারা হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

বিতর্কিত এসব ব্যবসায়িক মডেল একের পর এক সামনে আসতে শুরু করলে ২০২১ সালে সরকার ডিজিটাল কমার্স নীতি চালু করে। গ্রাহকদের করা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে যায় এবং অনেকেই আর পণ্য বা অর্থ ফেরত পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ই-কমার্স গ্রাহক জানান, তিনি ২০২১ সালের জুনে কিউকমে সাড়ে তিন লাখ টাকার পণ্য অর্ডার করেন। কিন্তু, সেই পণ্য আজও তার কাছে আসেনি। তিনি অপেক্ষায় আছেন সেই টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, শুধু ইভ্যালির কাছে গ্রাহকদের পাওয়া কয়েকশ কোটি টাকা। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা কোম্পানিটির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। এসব মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকিরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

এমন কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে এলেও কর্তৃপক্ষ কখনই এই তথ্য প্রকাশ করেনি যে, কত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

জনরোষের পরে সরকার এসব অর্থ ফেরতের বিষয় তদারকি করতে সেন্ট্রাল ডিজিটাল কমার্স সেল (সিডিসিসি) গঠন করে।

সেলের উপ-সচিব মো. সাঈদ আলী জানান, তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসক্রো সিস্টেমে ৫৩৪ কোটি টাকা পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪৭৬ কোটি ২ লাখ টাকা এখন পর্যন্ত ৯৫ হাজার ৯২৩ জন গ্রাহককে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এসক্রো থেকে অর্থ ফেরত দিতে দেরি হচ্ছে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত তথ্য ও আসল গ্রাহককে খুঁজে বের করতে অপরাধ তদন্ত বিভাগের সহায়তা নিতে হয়।'

তিনি জানান, এসক্রো সিস্টেমের বাইরের টাকা খুঁজে পাওয়া যেত না। গেটওয়ে চালু হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

সিডিসিসির প্রথম প্রধান ও বর্তমানে বাংলাদেশের কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, 'সিডিসিসির কর্মকর্তারা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন না। সম্ভবত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সিডিসিসিতে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে না।'

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, 'অনেক কোম্পানির মালিক কারাগারে আছেন, নয়তো পলাতক। এ কারণে টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ছে।'

তিনি বলেন, 'বিশেষ করে, ইভ্যালি টাকা দিচ্ছে না। ই-অরেঞ্জও গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছে। তবে, পর্যায়ক্রমে টাকা আদায় করা হবে এবং গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হবে।'

যা বলছে কোম্পানিগুলো

কিউকমের মালিক রিপন মিয়া জানান, তারা এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছেন।

তিনি দাবি করেন, গ্রাহকরা তাদের কাছে এখন প্রায় ১০ কোটি টাকা পাবেন। 'আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান হোক। আশা করি আগামী মাসের মধ্যে গ্রাহকদের সব টাকা ফেরত দিয়ে দিতে পারব।'

আরেকটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দালাল প্লাসের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা হাসনাইন খোরশেদ জানান, তাদের গ্রাহকদের প্রায় ১০ কোটি টাকা বিভিন্ন গেটওয়ে ও ব্যাংকে আটকে আছে।

তিনি বলেন, 'অনেক আগেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে গ্রাহকদের অভিযোগের একটি তালিকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা এখনও সেটা পাইনি। এর কারণেও টাকা ফেরত দিতে দেরি হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

3h ago