টুথপেস্ট, খাবার, খেলনা: বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী জাপান

রয়টার্স ফাইল ছবি

দেশের বিশাল ভোক্তা শ্রেণি ও শ্রমবাজারকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে জাপানি কোম্পানিগুলোর। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন তাদের পুরোনো ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন উদ্যোগও নিচ্ছে। জাপানের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বহু বিনিয়োগকারী এখান থেকে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানির পরিবর্তে বাংলাদেশের স্থানীয় ভোক্তাদের জন্যই উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে লায়ন করপোরেশনের কথাই ধরা যাক। ডিটারজেন্ট তৈরির জন্য ২০২২ সালে স্থানীয় কল্লোল গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এখন তারা বাসন মাজা সাবান ও টুথপেস্ট তৈরির জন্য নতুন একটি কারখানা স্থাপন করছে। জাপানের আরেকটি কোম্পানি কিউপি বাংলাদেশের বাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি করছে। অন্যদিকে, রিটেইল চেইনশপগুলোতে জাপানের প্রসাধনী, সুগন্ধি থেকে শুরু করে খেলনা, ইলেকট্রনিকস ও স্টেশনারি-সহ হাজারো পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজুয়াকি কাতাওকা বলেন, 'সস্তা শ্রম, বিপুল মানবসম্পদ এবং বাজার বড় হওয়ায়য় জাপানি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।'

জেট্রোর এই কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ৩৩০টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে। যদিও এর মধ্যে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানিমুখী উৎপাদনে আছে। জেট্রোর ২০২৪ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৭.৭ শতাংশ জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।

সম্প্রতি জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) ২৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য জাপান সফর করেছে। প্রতিনিধিদলটি টোকিও এবং ওসাকায় সেমিনারে অংশ নেয়, যেখানে অনেক জাপানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান কাতাওকা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অনেক স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারী হাত গুটিয়ে রাখলেও গত এক বছরে বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে।

ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানের জন্য নির্ধারিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হলে এবং ঢাকা-টোকিওর মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরিত হলে আরও জাপানি বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে জেবিসিসিআই সভাপতি তারেক রাফি ভূঁইয়া (জুন) বলেন, তারা ২৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে 'অত্যন্ত সফল' একটি জাপান সফর শেষ করেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা টোকিও ও ওসাকায় বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ ও বিনিয়োগ নিয়ে শীর্ষক দুটি বড় সেমিনার করেছি।' জেট্রো, জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ওসাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত এই সেমিনারগুলোতে বাংলাদেশের বাজার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী শত শত জাপানি কোম্পানি অংশ নেয়।

প্রতিনিধিদলের সদস্য ও জেবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মারিয়া হাওলাদার বলেন, জাপানি সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে দেখে, তবে তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ব্যাপারে হতাশ। তিনি জানান, জাপানি বিনিয়োগকারীরা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, হালকা প্রকৌশল এবং উৎপাদন খাতে বিশেষভাবে আগ্রহী।

উল্লেখ্য, প্রায় এক দশক আগে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপানেই প্রথম বাংলাদেশের রপ্তানি ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করে। এরপর জাপানের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং চাহিদা বাড়ায় রপ্তানি প্রায় ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। আগামী বছর নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পরও এই শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখতে জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরের আলোচনা চূড়ান্ত করেছে ঢাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

2h ago