৩০০ কোম্পানির ২ লাখ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন

শীর্ষ ঋণখেলাপি বিভিন্ন শিল্পগ্রুপসহ প্রায় ৩০০ কোম্পানি বছরের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন সুবিধা চেয়েছে। সব মিলিয়ে এর পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।

আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে—এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ, তানাকা গ্রুপ, ড্যান্ডি ডাইং, বেঙ্গল গ্রুপ, অ্যাম্বিয়েন্ট স্টিল বিডি, জিপিএইচ ইস্পাত, প্রাইম গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ, সিল্কওয়ে গ্রুপ, শাদাব ফ্যাশন ও অ্যাপেক্স উইভিং।

আরও আবেদন করেছে সিকদার গ্রুপ, ডায়মন্ড স্পিনিং মিলস, মিম গ্রুপ (আলেমা টেক্সটাইল), এসএমএ গ্রুপ (এএ নিট স্পিন), বিইউসি এগ্রো, রাইজিং স্টিল, ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস, অঙ্কুর স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ, সৌরভ অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কস, ইনটেনসিটি লিমিটেড এবং গ্লোবাল অ্যাসেট।

বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধের জন্য ৫ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। এর জন্য তারা মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট (এককালীন জমা) এবং ৩ বছর পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ড বা কিস্তি অব্যাহতির সুবিধা চেয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদনের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ২৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করেছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা ছিল খেলাপি ঋণ।

যেসব করপোরেট ঋণগ্রহীতা তাদের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে খেলাপি হয়েছেন, তাদের ঋণ পুনর্গঠন বা পুনঃতফসিলে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা দিতে গত জানুয়ারিতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবং যেসব ঋণগ্রহীতা নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত পরিস্থিতির কারণে খেলাপি হয়েছেন, তাদের জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর একটি সমন্বিত বিশেষ ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালাও জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সব ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা, বিশেষ করে যারা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরি করেন, তাদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতেই এই বিশেষ পুনঃতফসিল নীতিমালা জারি করা হয়েছে। প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের নীতিগত সহায়তা দিয়ে সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বজায় রাখাই এর উদ্দেশ্য।

বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ কমাতে গতকাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রেকর্ড ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ। ২০০০ সালের পর এটিই খেলাপি ঋণের সর্বোচ্চ হার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে ব্যাংকাররা আশঙ্কা করছেন, এই পদ্ধতি ঋণ পরিশোধ না করার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করতে পারে এবং ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা দুর্বল করতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে থাকা দীর্ঘদিনের ঋণখেলাপিরাও এর অন্তর্ভুক্ত থাকায় এই আশঙ্কা বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ে দায়ের করা ২ লাখ ২২ হাজার ৩৪১টি মামলায় ৪ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ আটকে আছে।

পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির গতি কমে যাওয়া এবং নতুন মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকায় মামলার জট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

গত এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ১১ হাজার ৯৪৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো মাত্র ২ হাজার ৯১০ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। একই প্রান্তিকে ৯৬ হাজার ৯০৪ কোটি টাকার ১৪ হাজার ৬৫২টি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

Crowds spilled over into surrounding areas, with large gatherings seen in Farmgate, Karwan Bazar and nearby localities

2h ago