বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া বেড়েছে ৬০ শতাংশ

খেলাপি ঋণ, ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

রাজস্ব বৃদ্ধিতে ধীরগতি ও বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তহবিলের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরতা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোট ছাপিয়ে সরাসরি সরকারকে ঋণ দেওয়া  বন্ধ করে দেওয়ায় সরকারের আর্থিক চাহিদা মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ৯৮ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের ৬১ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি।

এতটা বৃদ্ধি সত্ত্বেও ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা – যা আগের বছরের ৪৬ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা থেকে সামান্য কম।

নিট ব্যাংক ঋণ হিসাব করা হয় সরকার ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করা অর্থ বাদ দিয়ে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ৫৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

সরকার সাধারণত ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের মাধ্যমে ঋণ নেয়। গত অর্থবছর পর্যন্ত সরকার সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও অর্থ নিয়েছে।

তবে অর্থনীতিবিদ ও নীতি নির্ধারকদের ব্যাপক সমালোচনার পর এই অনুশীলন বন্ধ করা হয়। তারা সতর্ক করেছিলেন যে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে নতুন টাকা ছাপানো হলে টাকার যোগান বেড়ে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন,  কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ঋণ দেওয়া থেকে সরে আসার পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উপর নির্ভর করা ছাড়া সরকারের কাছে আর কোনো উপায় ছিল না।

তিনি বলেন, 'কর রাজস্ব প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ায়, মনে হচ্ছে সরকার তার বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য ক্রমশ ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।'

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুসারে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রাজস্ব আদায় মাত্র ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মার্চ মাস পর্যন্ত, এনবিআর – যা রাষ্ট্রের মোট রাজস্বের ৮৬ শতাংশের জোগান দেয় সংগ্রহ করেছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে অনেক কম।

এদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও কমে গেছে। উচ্চ সুদহার ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এ ক্ষেত্রে বড় কারণ বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

এর ফলে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য সৃষ্টি হয়েছে, যা তাদেরকে সরকারি সিকিউরিটিজে (বন্ড ও বিল) বেশি বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা স্পষ্টতই থেমে গেছে, যা ২০০৪ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এটি ব্যবসা ও বিনিয়োগের সংকটজনক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা আগের মাসের ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ থেকে কম।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো এখন সরকারি ট্রেজারি বিল এবং বন্ডে প্রচুর বিনিয়োগ করছে।"

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চলতি প্রান্তিকে সরকারের ঋণের চাহিদা আরও বাড়বে, যা ব্যাংক ঋণের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতাকেই বোঝায়।

তবে তিনি বলেন, এখনো সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

'এখনো এই হার উদ্বেগজনক নয়,' মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

অর্থবছর ২০২৫-এর সংশোধিত বাজেটে সরকার ব্যাংক থেকে ৯৯ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে। এ পর্যন্ত সরকার এর প্রায় ৪৩ শতাংশ ঋণ নিয়েছে।

ব্যাংক ঋণ ছাড়াও, সরকার ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৩৫ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই), বিমা কোম্পানি এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী। ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে।

গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার জাতীয় সঞ্চয়পত্রের নিট অবস্থান বাদ দিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ৭৭ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Sabalenka beats Anisimova to win second straight US Open title

The Belarusian has not missed a hardcourt major final since 2022 and her latest trophy brings her Grand Slam haul to four, as she became the first woman to win back-to-back US Opens since Serena Williams claimed three straight from 2012 to 2014

Now