অভিযোগ করলেও সমাধান পান না টেলিটকের গ্রাহক

টেলিটক, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটকের লাভ কত, টেলিটকের মুনাফা,

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কল সেন্টারের মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর পরও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম অপারেটর টেলিটকের অধিকাংশ গ্রাহক।

বিটিআরসির নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিটিআরসির (১০০ শর্টকোড) কল সেন্টার থেকে পাওয়া অভিযোগের প্রায় ৭৫ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়নি বা এখনো সমাধানের অপেক্ষায় আছে।

অন্যভাবে বললে, কল সেন্টারের মাধ্যমে জমা পড়া ২ হাজার ৮৫টি অভিযোগের মধ্যে মাত্র ৫২৪টি বা ২৫ দশমিক ২ শতাংশ সমাধান হয়েছে।

একই সময়ে বেসরকারি টেলিকম অপারেটররা ৯৮ শতাংশের বেশি গ্রাহকের অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে।

এর মধ্যে রবি আজিয়াটার (এয়ারটেলসহ) গ্রাহকরা ৪ হাজার ৪৭২টি অভিযোগ করেন, যার ৪ হাজার ৪১৬টি বা ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে।

গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা মোট ৩ হাজার ১২৬টি অভিযোগ করেন, যার মধ্যে ৩ হাজার ৮৯টি বা ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে।

এছাড়া বাংলালিংকের গ্রাহকরা ১ হাজার ২৫৬টি অভিযোগ করেন। যার মধ্যে ১ হাজার ২৫১টি বা ৯৯ দশমিক ৬ শতাংশ সমাধান করা হয়েছে, যা এ খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ।

টেলিটক নেটওয়ার্কের পিছনে হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি অর্থ ব্যয় করা সত্ত্বেও গ্রাহক হারাচ্ছে। তার মধ্যে এই ভয়াবহ তথ্য সামনে এসেছে।

এখানে উল্লেখ্য ২০২৩ সালে একমাত্র অপারেটর হিসেবে গ্রাহক হারিয়েছিল টেলিটক। গত বছর এর গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার কমে ৬৪ লাখ ৬০ হাজার দাঁড়িয়েছিল।

বর্তমানে টেলিটকের গ্রাহক আছে ৬৫ লাখ ৫০ হাজার।

বিপরীতে অন্য তিন অপারেটরের ভালো পারফরম্যান্সের কারণে ২০২৩ সালে গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৫ লাখ বেড়েছে।

গ্রাহক পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে টেলিটকের গ্রাহকরা তুলনামূলকভাবে বেশি অভিযোগ করেছেন।

২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিটিআরসির কাস্টমার সেন্টারের মাধ্যমে ১০ হাজার ৯৩৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে।

দেশে মোট ১৯ কোটি ৩৭ লাখ মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে ৬৫ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক থাকা টেলিটকের মার্কেট শেয়ার মাত্র ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

তবে রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটরটির গ্রাহকের অভিযোগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

অন্যদিকে মোট অভিযোগের ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ হলো ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মার্কেট শেয়ার থাকা গ্রামীণফোনের।

রবির মার্কেট শেয়ার ৩০ দশমিক ২১ শতাংশ এবং অভিযোগের অংশ ৪০ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং বাংলালিংকের মার্কেট শেয়ার ২৩ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং অভিযোগের অংশ ১৯ দশমিক ০৪ শতাংশ।

টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নুরুল মাবুদ চৌধুরী বলেন, 'বেশিরভাগ গ্রাহকের অভিযোগ নেটওয়ার্ক কভারেজ নিয়ে। আমাদের পর্যাপ্ত বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) নেই।'

বিটিএস সাধারণত টেলিকম টাওয়ার হিসেবে পরিচিত।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা নেটওয়ার্ক কভারেজ সম্প্রসারণে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে বলে আমরা আশাবাদী।'

দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক কাভারেজ প্রদানের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য মার্কেট শেয়ার অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে টেলিটক। কিন্তু ক্রমবর্ধমান লোকসানের কারণে এখন সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গ্রাহক হারাতে থাকায় ও বিভিন্ন সার্ভিস মেট্রিক্সে এর পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় টেলিটকের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে।

৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে টেলিটকের মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। যা প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিট লোকসানের ধারাবাহিক প্রবণতার প্রতিফলন।

২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল ২০১০-১১ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে মুনাফা করেছিল টেলিটক।

চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম কোম্পানিগুলোকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে মুনাফা অর্জনের নির্দেশ দিয়ে কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

1h ago