ধারাবাহিকভাবে কমছে চামড়া রপ্তানি

চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, চামড়া রপ্তানি, সাভার ট্যানারি,
সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে কাজ করছেন শ্রমিকরা। ছবি: পলাশ খান/ফাইল ফটো

স্থানীয় বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকা এবং ক্রেতারা অন্য দেশে চলে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের চামড়া রপ্তানি কমছে। অথচ চামড়া একসময় দেশের তিনটি প্রধান রপ্তানি পণ্যের একটি ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে (এসটিআইই) স্থানান্তর, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মারাত্মক প্রভাবও চামড়া রপ্তানি কমার অন্যতম কারণ।

এমন চ্যালেঞ্জের মুখে গত এক দশকে চামড়া রপ্তানি অর্ধেকের বেশি কমেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চামড়া রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১২৩ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১৪ অর্থবছরে ছিল ৩৯৭ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ডলার।

ইপিবির তথ্য বলছে, বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে চামড়া রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১২৫ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার।

দেশের মূল্য সংযোজন (ভ্যালু অ্যাডেড) বৃদ্ধির অর্থ কারখানার সংখ্যা (দেশীয় হোক বা রপ্তানি উদ্দেশ্যে) বেড়েছে। ফলে ট্যানড চামড়ার অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বেড়েছে।

বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির তথ্য থেকে ট্যানড চামড়ার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি ও মূল্য সংযোজনের বিষয়টি অনুমান করা যায়।

যেমন ২০১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার এবং গত এক দশক ধরে তা বিলিয়ন ডলারের ওপরে আছে।

কিন্তু ২০২৩ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৬১ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলার।

একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান পণ্য হিসেবে বিবেচিত হতো পাট, চা ও চামড়া। কিন্তু বিশ্বব্যাপী রপ্তানি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারানো বা দেশের ক্রমবর্ধমান ভোগের কারণে সেই গৌরব ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে চা-এর প্রসঙ্গ টানা যেতে পারে। বছরের পর বছর ধরে দেশের বাজারে চায়ের ভোক্তা বেড়েছে।

একই সঙ্গে কম দামের প্লাস্টিকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বাজারের বড় অংশ দখল করতে পারেনি পাট।

লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ২৫ বছর আগেও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের মোট রপ্তানির ৭৫ শতাংশেরও বেশি অংশ ছিল চামড়ার। কিন্তু তা কমে এখন প্রায় ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে স্থানীয় বাজারে মূল্য সংযোজন বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'তাছাড়া ট্যানারি ও সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে পরিবেশগত মান না মানা, চামড়া রপ্তানি কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ। এসব কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা দাম কম দিয়ে থাকেন।'

একই কথা বলেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত উল্লাহ।

তিনি বলেন, 'সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে দুর্বল কমপ্লায়েন্সের কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ট্যানড চামড়া বিক্রি করতে পারেন না।'

'এমনকি দুর্বল কমপ্লায়েন্স ট্যানারি মালিকদের লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পেতে বাধা হয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ব্যবসা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি,' বলেন তিনি।

তিনি মন্তব্য করেন, 'ফলে স্থানীয় স্থানীয় রপ্তানিকারকরা ৬৫ শতাংশ ট্যানড চামড়া চীনে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক দামের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ কম দাম দিয়ে থাকেন।'

চীন ছাড়াও কিছু চামড়া ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশে পাঠানো হয়। এছাড়া প্রায় ১৫ শতাংশ ট্যানড চামড়া ব্যবহার করে দেশীয় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য কোম্পানিগুলো।

বিটিএর সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বর্তমানে তিন থেকে চারটি ট্যানার এলডব্লিউজি সনদ পাওয়ার যোগ্য।

কিন্তু এসটিআইইতে সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (সিইপিটি) দুর্বল কমপ্লায়েন্সের কারণে ওই চারটি ট্যানারি তা নিতে পারছে না বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দিলজাহান ভূঁইয়া বলেন, 'হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের কারণে অনেক ক্রেতা অন্য দেশ বেছে নিচ্ছেন। ফলে চামড়া রপ্তানি আরও কমে যেতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'কিছু চ্যালেঞ্জের কারণে অনেক ট্যানারি চালু হচ্ছে না। ২০০৫ সালে এলডব্লিউজি সনদ প্রবর্তনের আগে ইতালির মতো কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে চামড়া আমদানি করত।'

Comments

The Daily Star  | English

One killed in crude bomb blast during clash at Mohammadpur Geneva Camp

The victim, Zahid, was not involved in the clash and had gone out with friends when he got caught in the middle of the violence, family say

13m ago