‘চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছি’

বরিশালের বিভিন্ন এলাকার মাদ্রাসা থেকে আনা কোরবানির পশুর চামড়া কিনে স্তূপ করছে ব্যবসায়ীরা। ছবি: টিটু দাস/স্টার

বরিশাল নগরের জিয়া সড়ক থেকে মাওলানা আরেফিন স্থানীয় মাদ্রাসার ৭৫টি গরুর কাঁচা চামড়া নিয়ে বরিশাল নগরীর পদ্মাবতী এলাকায় এলে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা গড়ে দাম হাকেন ৩০০ টাকা।

এ সময় মাদ্রাসাশিক্ষক আরেফিন বলেন, 'দরকার হলে কাঁচা চামড়া কীর্তনখোলা নদীতে ভাসিয়ে দেবো, তবু এই অল্প দামে দেব না'। তবে শেষ পর্যন্ত উপায়ন্তর না পেয়ে তাকে এই দামেই বিক্রি করতে হয়।

অধিকাংশ কাঁচা গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা।

তাদের দাবি, বড় ও মাঝারিসহ সব গরুর চামড়ার পিস গড়ে ৩০০ টাকার বেশি কেউ দর দিচ্ছে না। বরিশাল নগরির কাঁচা চামড়ার পাইকারি বাজার পদ্মাবতী ও কীর্তনখোলা নদীর পাড় ঘুরে দেখা যায়, বর্গফুটে নয়, চামড়া বিক্রি হচ্ছে পিস হিসেবে। এখানে সবচেয়ে বড় চামড়া ৩০০-৫০০ টাকা পিস ধরে এবং সবচেয়ে ছোট গরুর চামড়া ২০০ টাকা পিস ধরে বিক্রি হচ্ছে। খাসি ও ছাগলের চামড়ার কোনো দামই নেই।

বরিশাল সদর উপজেলার কড়াপুর এলাকা থেকে শাহাদাত হোসেন ১২০টি চামড়া নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, গরুর চামড়ার কোনো দাম নেই। একটি জুতার দাম হাজার টাকা হলেও গরুর চামড়ার দাম মাত্র ৩০০ টাকা।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সব সিন্ডিকেট করে চামড়ার দর কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

অনেক চামড়া বিক্রেতাই বলছেন, এই দর থাকলে তাদের পথে বসতে হবে।

বরিশাল নগরীর রুপাতলী এলাকার দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসার শিক্ষক মজিবুর রহমান ২৫০টি কাঁচা চামড়া নিয়ে এলেও ভালো দাম না পেয়ে ফেরত চলে যান।

কাশিপুর মাদ্রাসার শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছি। আটটি গরুর চামড়া মাত্র তিন হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি।

ঢাকার ট্যানারিগুলোতে পাঠানোর আগে চামড়ায় লবণ মাখা হচ্ছে। ছবি: টিটু দাস/স্টার

চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৬ সালে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের একটি বড় অঙ্কের টাকা ঢাকার ট্যানারি মালিকরা আজ পর্যন্ত আটকে রাখছেন। ফলে তারা সরকার-নির্ধারিত রেটে চামড়া কিনতে পারছেন না।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান মাসুম বলেন, একটি কাঁচা চামড়া লবণসহ ঢাকায় পাঠাতে তাদের ঘরে ৪০০ টাকা খরচ হয়। একইসঙ্গে ট্যানারি মালিকরা তৎক্ষণাৎ টাকা দেন না, দীর্ঘদিন মূলধন আটকে রাখেন। ফলে অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে গেছে।

তিনি স্বীকার করেন, এর ফলে মাঠ পর্যায়ে চামড়া বিক্রেতারা কোনো দাম পাচ্ছে না।

চামড়া ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাসির বলেন, চামড়ার লবণ দেওয়া থেকে শুরু করে প্রসেসিং করাতে তাদের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়। এর ফলে তারা বর্গফুটে কিনতে পারেন না।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, বরিশাল অঞ্চলে অন্তত পাঁচ-ছয় জন পাইকারি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার পিস পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম বলেন, এবার গরম আবহাওয়া থাকায় কাঁচা চামড়ার অন্তত ১৫ ভাগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, 'অনভিজ্ঞ হাতে যারা চামড়া ছাড়ান, তাদের হাতেও কিছু চামড়া নষ্ট হয়। তবে এবার আবহাওয়া অত্যন্ত গরম থাকায় গ্রাম পর্যায়ের দূরদূরান্তের অন্তত ১৫ ভাগ চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

7h ago