কর্মসংস্থান ও শিক্ষার বাইরে দেশের ৬২ শতাংশ তরুণী

এনইইটি, নিষ্ক্রিয় জনগোষ্ঠী, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিবিএস,

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রতি পাঁচজন তরুণীর মধ্যে তিনজন কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের (এনইইটি) বাইরে আছে। এনইইটি দিয়ে মূলত ১৫-২৪ বছর বয়সী নিষ্ক্রিয় জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২ অনুযায়ী, ২০২২ সালে এনইইটি ক্যাটাগরিতে নারীদের অংশ ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

একই বছরে এই ক্যাটাগরির সামগ্রিক জনসংখ্যার অংশ বেড়ে ৪০ দশমিক ৬৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে যা ছিল ৩৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ২১ দশমিক ৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে এনইইটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ, যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ এনইইটি ক্যাটাগরিতে পড়ে।

সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চের নির্বাহী চেয়ারপারসন রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, 'এটি অবশ্যই দেশের জন্য খারাপ পরিস্থিতি, কারণ এটি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সম্ভাবনার বড় অপচয়।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'এটি ব্যক্তি ও দেশ উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।'

তিনি বলেন, 'প্রথমত এ কারণে জনশক্তির একটি বড় অংশ অব্যবহৃত ও যথাযথ মূল্যায়নের বাইরে থেকে গেছে। দ্বিতীয়ত, এটি সামাজিক অসন্তোষ, অস্থিরতা এবং পারিবারিক সহিংসতা বাড়ায়।'

জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম দপ্তরের কর্মসংস্থান বিষয়ক সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, 'এনইইটির আওতায় তরুণীদের সংখ্যা বাড়ছে, কারণ শহরাঞ্চলের কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ কমে গেছে।'

তিনি বলেন, চাহিদার দিক থেকে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত।

'পোশাক শিল্পে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় স্বল্প শিক্ষিত নারীদের সুযোগ কমে গেছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ নারীদের জন্য পরিবারের বাইরে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত। এ কারণে তারা শ্রমবাজারে প্রবেশে নিরুৎসাহিত হতে পারে।

তিনি মন্তব্য করেন, 'এছাড়া শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তা বলা যাবে না।'

তিনি মনে করেন, অল্পবয়সী নারীদের মজুরি-বহির্ভূত চাকরিতে যাওয়ার প্রবণতা ও মহামারি-পরবর্তী সময়ে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার উচ্চ হারই এনইইটি বৃদ্ধির মূল কারণ।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাবও একটি কারণ বলে জানান তিনি।

তার মতে, বর্তমানে তরুণদের জন্য যে প্রশিক্ষণ সুবিধা রয়েছে তা শ্রমবাজারের প্রতিযোগিতার সঙ্গে সক্ষমতা বাড়াতে উপযুক্ত নয়।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কর্মসংস্থান ও কর্মসূচি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ অভি হোসেন মনে করেন, জিডিপির শতকরা হিসেবে শিক্ষায় কম বিনিয়োগ অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাকে ব্যয়বহুল করে তুলছে।

'ফলে অনেক তরুণ বেকার বা কর্মহীন থাকলেও শিক্ষা নিচ্ছে না। এমনকি তারা চাকরিও খোঁজে না।'

তিনি বলেন, সংকুচিত শ্রমবাজারের কারণে বেকার বা শ্রমশক্তির তুলনায় শূন্যপদ কম। তাই তারা চাকরি ও প্রশিক্ষণ নিতে উৎসাহী হন না।

রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, এনইইটিদের অবশ্যই উপযুক্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা ও প্রাসঙ্গিক দক্ষতা বঞ্চিত তরুণরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারে না।

তিনি আরও পরামর্শ দেন, তাদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমবান্ধব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মশক্তিতে তরুণদের চাহিদা বাড়াতে হবে।

তবে, এ জন্য কেবল উপযুক্ত নীতি নিলে হবে না, তার যথাযথ প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, তরুণদের কর্মসংস্থান বাড়াতে ও মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নীতিমালা গ্রহণে শিক্ষা খাতের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।

তাছাড়া শিক্ষা বা চাকরির সঙ্গে যুক্ত নন এমন তরুণরা হতাশ হয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, 'দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়তা করতে এনইইটি তরুণদের সংখ্যা কমানো দরকার, বিশেষ করে পুরুষের সংখ্যা।'

Comments

The Daily Star  | English
RMG violence

Violence in Bangladesh’s RMG sector: Disposable lives, dispensable labour

Can we imagine and construct a political system that refuses to subordinate human dignity to the demands of global accumulation?

11h ago