জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে

মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, অর্থনৈতিক সংকট, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিনিময় হার, ক্রলিং পেগ,
গ্রাফিক্স: রেহনুমা প্রসৃন

২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশের অর্থনীতি আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। মূলত শিল্পপণ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদন ভালো হওয়ায় অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সাময়িক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এছাড়া একই অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হবে বলে অনুমান করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, 'তৃতীয় প্রান্তিকের এই প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত ছিল।'

তিনি বলেন, এই প্রবৃদ্ধি জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া সাধারণ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিফলন।

তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় ছিল। ফলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করা থেকে বিরত ছিল। তখন সরকারি বিনিয়োগও স্থবির অবস্থায় ছিল।

কিন্তু তৃতীয় প্রান্তিকে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ নতুন গতি পেয়েছে।

একই কথা বলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন তিনি। এগুলো হলো- বোরো উৎপাদন বৃদ্ধি, বেশি প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি আয়।

বিনায়ক সেন বলেন, 'আমন মৌসুমের চেয়ে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এতে আমনের ঘাটতি পূরণ হয়েছে।'

এছাড়া রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশে মোটা অঙ্কের প্রবাসী আয় এসেছে।

তিনি বলেন, 'আগের প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকের অগ্রগতির প্রবণতা ভালো ছিল, এটি প্রবৃদ্ধিতে হয়তো সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। তবে কতটুকু বেড়েছে তা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না।'

এর সঠিক ব্যাখ্যা বিবিএস দিতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রায় ৩৩ শতাংশ অবদান রাখে শিল্প খাত। ২০২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ বেড়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এছাড়া বাণিজ্য, পরিবহন, হোটেল, আইটি ও আর্থিক কার্যক্রমের সমন্বয়ে গঠিত সেবা খাত জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বেশি অবদান রাখে। জিডিপিতে প্রায় ৫৩ শতাংশ অবদান রাখা সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ হয়েছে।

একইভাবে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়েছে।

তবে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, বিবিএসের ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্যে রপ্তানি গরমিলের প্রভাব থাকতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার সংশোধিত রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে রপ্তানি তথ্যে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের ব্যবধান সামনে আসে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, 'জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান বেশ কিছু সময় ধরে সন্দেহজনক ছিল।'

কারণ জিডিপির পরোক্ষ (প্রক্সি) সূচকগুলো সামগ্রিক অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সূচকের মধ্যে আছে বেসরকারি বিনিয়োগ, ঋণপ্রবাহ, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি এবং জ্বালানির ব্যবহার।

এমনকি সর্বশেষ মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক কাঠামোও এ ধরনের বিভ্রান্তির ইঙ্গিত দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা আশা করেছিলাম ত্রৈমাসিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন প্রবর্তনের ফলে এই সমস্যার আংশিক সমাধান হবে। তবে পরোক্ষ সূচকের কারণে বিভ্রান্তি থেকে গেছে।'

তিনি বলেন, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক কেবল বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই মন্দা ছিল না, ভোগের দিক থেকেও মন্দা ছিল। যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।

'রপ্তানি তথ্যের সাম্প্রতিক গরমিল সমস্যার গভীরতাকে সামনে এনেছে। আসলে জাতীয় আয়ের প্রাক্কলনের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মতো অন্যান্য সূচকগুলোর তথ্য পেতে একটি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের সময় এসেছে।'

'অর্থনীতির পরবর্তী ধাপে যাওয়ার সময় সরকারি তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়তি গুরুত্ব পাবে।'

সুতরাং, আমাদের রিয়েল-টাইম, বিশ্বাসযোগ্য অফিসিয়াল তথ্যের গুরুত্বকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়,' তিনি বলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body being taken to Manik Mia Avenue for janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago

Farewell

10h ago