পুঁজিবাজার চাঙা করতে আইসিবিকে ১০০০ কোটি টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা

সরকার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ১ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির তারল্য সংকট কাটাতে ও শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সংশোধিত জাতীয় বাজেটের মাধ্যমে এই অর্থসহায়তা দেওয়া হতে পারে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

অর্থ উপদেষ্টাসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন সফর শেষে দেশে ফিরলেই অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে বলে সূত্রটি জানায়।

প্রসঙ্গত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র বিনিয়োগ ব্যাংক আইসিবি স্থায়ী আমানত রসিদ (এফডিআর), এবং বন্ডের মাধ্যমে মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে পুর্নবিনিয়োগ করে থাকে।

গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন ডিভিশনের (এফআইডি) কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছিল আইসিবি। পরে এফআইডি বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে জানায়।

গত মাসে এফআইডির পুঁজিবাজার বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে জানায়, আইসিবিকে ১০ বছরের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ হিসেবে ১৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া প্রয়োজন, যার মধ্যে প্রথম দুই বছর গ্রেস পিরিয়ড থাকবে।

চিঠিতে জানানো হয়, আইসিবি পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তারল্য সংকটে ভুগছে।

২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত আইসিবি এফডিআর ও বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।

এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ ৬ হাজার কোটি টাকা (মূলধন ও সুদসহ) ফেরত দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গেছে, যা ক্রমাগত বাড়ছে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতি মাসে প্রায় ৯০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতেও আইসিবিকে ৮০ কোটি টাকায় ন্যাশনাল টি কোম্পানির ৬৬ লাখ শেয়ার কেনার নির্দেশ দেয় সরকার।

এফআইডির চিঠিতে বলা হয়, 'ফলে আইসিবির তারল্য সংকট আরও তীব্র হয়েছে।'

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থ দিতে রাজি হয়নি। কারণ হিসেবে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জানায়, এতে দেশের মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি উচ্চমাত্রায় আছে।

এফআইডিকে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, 'এ ধরনের আর্থিক বরাদ্দ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।'

এতে আরও বলা হয়, এছাড়া এত দীর্ঘ মেয়াদের ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ-১৯৭২-এরও পরিপন্থী এবং বর্তমান সংকোচনমূলক আর্থিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে, সংশোধিত জাতীয় বাজেটের মাধ্যমে সরকার থেকে তহবিল সংগ্রহ করা যেতে পারে। এতে মূল্যস্ফীতি তুলনামূলক কম হারে বাড়বে।

আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিষ্ঠানটির বিশাল দায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারে যথাযথ সহায়তা নিশ্চিত করতে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, 'তারা আগামী জানুয়ারিতে অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন।'

তবে আইসিবি চায় যত দ্রুত সম্ভব অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক। কারণ বাজার এখন নিম্নমুখী এবং শেয়ারের দাম তুলনামূলক কম।

এদিকে, গত ৩০ দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১০ শতাংশ বা ৫১২ পয়েন্ট কমেছে।

আবু আহমেদ বলেন, 'যদি এখন অর্থ পাওয়া যায় এবং এই নিম্নমুখী বাজারে বিনিয়োগ করা যায়, তবে দ্রুতই লাভ আসবে। আমরা মূলধনী লাভ থেকে পুরনো দেনা পরিশোধ করতে পারব।'

এর আগে, ২০২৪ সালে সরকার সার্বভৌম গ্যারান্টির মাধ্যমে আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছিল। এর মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধে ব্যবহৃত হয়।

বাকি অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছিল, এবং সেই বিনিয়োগে বর্তমানে প্রায় ২০ শতাংশ মূলধনী লাভ হয়েছে বলে জানান আইসিবি চেয়ারম্যান।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia contribution to Bangladesh democracy

A leader who strengthened our struggle for democracy

Khaleda Zia leaves behind an enduring legacy of service.

13h ago