সরকারের অত্যধিক ব্যাংক ঋণে বাধাগ্রস্ত বেসরকারি খাত

রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর সরকারের অত্যধিক নির্ভরতা বেসরকারি খাতকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর ফলে উৎপাদনশীল বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য খুব কম জায়গা থাকছে। 

গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন জিইডি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, চলতি বছরের আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমেছে। একই মাসে সরকারি খাতে নিট ঋণ ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, উচ্চ সুদের হার, সতর্ক ঋণনীতি এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
অন্যদিকে, কর আদায়ে ঘাটতির ফলে সৃষ্ট রাজস্ব ঘাটতি ও ব্যয় মেটাতে সরকারের প্রয়োজন থেকেই মূলত সরকারি খাতে ঋণ সম্প্রসারণ ঘটেছে।
 
অক্টোবর সংখ্যার ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুক অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্ট-অক্টোবর সময়কাল বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিতে বিদ্যমান স্থায়ী ট্রেড-অফ বা পারস্পরিক ছাড়ের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতি ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমাতে সাহায্য করেছে, তবে এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি এখনও উচ্চ থাকলেও গত কয়েক মাসে স্থিতিশীলতার লক্ষণ দেখা দিয়েছে।

মে মাসে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে জুনে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে আসার পর সেপ্টেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যা এক মাস আগে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ ছিল।

তবে, বেসরকারি খাতে ঋণ কমে গেলে তা 'সরাসরি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিও কমিয়ে দেয়'।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ঐতিহাসিক নিম্ন স্তর ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয় এবং ব্যাংক ঋণের ওপর সরকারের অব্যাহত উচ্চ নির্ভরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

টেকসই এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জিইডি জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের (২৫-২৬ অর্থবছর) প্রথম কয়েক মাসে আমানতের বৃদ্ধি কিছুটা ধীর হলেও ওঠা-নামার ধারা বজায় রয়েছে, যা জনসাধারণের আস্থা ফেরানোর জন্য নেওয়া সংস্কারের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।

আমানতের ধীর বৃদ্ধি মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ঘটে, যা বাস্তব আয় কমিয়ে দেয় এবং পরিবারগুলোর সঞ্চয় করার ক্ষমতা সীমিত করে। তবে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বেশি আসা এবং সরকারের পদক্ষেপে আমানত কিছুটা বেড়েছে।

জিইডির প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আগামী মাসগুলোর জন্য সতর্ককতামূলক আশাবাদের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। 

 এতে বলা হয়েছে, যেহেতু নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, সেহেতু আগামী কয়েক মাসে অর্থনীতিতে নির্বাচনী কার্যক্রম দেখা যাবে। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।

Comments

The Daily Star  | English

Farewell

Nation grieves as Khaleda Zia departs, leaving a legacy of unbreakable spirit

8h ago