প্রথম নাটকে জুটি বেঁধেছিলাম কবরীর সঙ্গে: তারিক আনাম খান

তারিক আনাম খান। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

তারিক আনাম খানের মঞ্চে অভিনয় শুরু ১৯৭২ সালে। তারপর টেলিভিশনে প্রথম নাটকে অভিনয় করেন কবরীর বিপরীতে। প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা লাল সবুজের পালাতেও নায়িকা ছিলেন কবরী। মঞ্চ নাটকের দল নাট্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তার হাত ধরে উঠে এসেছেন অনেক অভিনেতা। আজও অভিনয়ে সরব তিনি।

১০ মে ছিল তার জন্মদিন। বিশেষ দিনে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

তারিক আনাম খান বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন দেশের নাগরিক হলাম। ১৯৭২ সাল থেকে মঞ্চে অভিনয় শুরু করি শিল্পকে ভালোবেসে। তার আগেও সাতক্ষীরায় নিজ শহরে থাকার সময় সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্ত দেশ স্বাধীনের পর সিদ্ধান্ত নিই অভিনয়টাই করব, শিল্পের পথে থাকব। সেভাবেই ঢাকা চলে আসি এবং কাজ শুরু করি।

পেছন ফিরে তাকালে কত কী দেখতে পাই, কত স্মৃতি ভেসে উঠে চোখের সামনে। কতটা পথ হেঁটে এসেছি। ৫০টা বছর তো কম নয়! কিন্ত একই পথে আছি। অন্য কোনো পথে যাইনি কিংবা টানেনি। আজ এত বছর পর মনে হয় অর্থপূর্ণ কিছু করতে পেরেছি। জন্মদিন এলে দেখতে পাই অনেক মানুষ আমাকে ভালোবাসে।

মানুষের ভালোবাসা আমাকে স্পর্শ করে। কেউ কেউ আমাকে শিক্ষক, গুরু, ওস্তাদ মনে করে। হয়তো কিছু একটা করতে পেরেছি বলেই মানুষ আমাকে ভালোবাসে। এটা আমার পরম প্রাপ্তি।

এত বছর পরও মনে হয় কেন অভিনয় করি? আমার কাছে সহজ উত্তর, অভিনয় করি ভালোবাসা থেকে। নাটকে ও সিনেমায় অভিনয় করতে এবং পরিচালনা করতে ভালোবাসি। যখন মুক্তিযুদ্ধ করি, যখন দিল্লিতে পড়ালেখা করতে যাই, তখনই ভেবেছিলাম আমার দায় আছে দেশের প্রতি এবং শিল্পের প্রতি। সেই দায় থেকে একটুও সরিনি।

জন্মদিনটি আমাকে ইমোশনাল করে। মানুষের ভালোবাসা আমাকে ইমোশনাল করে। আমার একটাই ইচ্ছে, যতদিন বাঁচি শিল্পের পথে থেকে, শিল্পের মাধ্যমে কিছু করে বাঁচতে চাই। খুব সস্তা হইনি কখনো। হতে পারিনি, পারব না। আমার নিজের কাছে ভালো না লাগলে কোনো কাজ করি না। শিল্প আমাকে এভাবেই পথচলা শিখেয়েছে।

৫০ বছর আগে যখন মঞ্চ নাটক করা শুরু করি তখন নিজেকে প্রমাণ করা খুব কঠিন ছিল। কারণ তখন একটাই মাত্র মহিলা সমিতি, যেখানে অভিনয় করতে পারি। একটা মাত্র টেলিভিশন যেখানে নাটক করার সুযোগ ছিল। অন্যদিকে আমি পরিবারের বড় ছেলে। পরিবারে সদস্যরা আছেন। সেই অবস্থায় সদ্য স্বাধীন দেশে অভিনয় শুরু করেছি। সব মিলিয়ে কঠিন যাত্রা ছিল।

তারপরও থেমে থাকিনি। ওই সময় থাকতাম আজিমপুরে। প্রতিদিন নিয়ম করে মহিলা সমিতি কিংবা মগবাজারে যেতে হতো দলের জন্য। আজিমপুর থেকে সরাসরি ওদিকে কোনো বাস ছিল না। ফলে প্রায়ই হেঁটে হেঁটে মহিলা সমিতিতে যেতে হতো। কতদিন হেঁটে হেঁটে মহিলা সমিতিতে গিয়েছি! পকেটে পয়সা থাকত না তা নয় বিষয়টি। সময়মতো পৌঁছাতে হবে সেজন্যই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চলে যেতাম।

তারপর দলের জন্য কাজ করতাম। রামপুরা টেলিভিশনেও কতদিন হেঁটে হেঁটে গিয়েছি। নিজেকে যোগ্যতা দিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে।

সেই সময় বারবার একটি কথা মনে হয়েছে, এর শেষ দেখতে চাই। দেখি না শিল্পের জীবনটা? তবে সবসময় মনে হয়েছে এবং জীবন থেকে বুঝেছি, শিল্পীর জীবন সহজ নয়।

আমি কৃতজ্ঞ প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে। তিনি আমাকে মঞ্চে ওথেলো নাটকে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন। এটা আমার অভিনয় জীবনের বড় ব্রেক ছিল। তারপর টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করতে যাই। প্রথম অভিনয় করি মাটির কোলে ধারাবাহিকে কবরীর সঙ্গে জুটি বেঁধে। নাটকটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপর প্রজাপতি নাটকে অভিনয় করি। এটাও দর্শকদের মাঝে সাড়া জাগায়। সংশপ্তক নাটকটিও আমার জীবনের বড় টার্নিং পয়েন্ট।

অন্যদিকে সিনেমায় অভিনয় করি। প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার নাম লাল সবুজের পালা। কবরী ছিলেন নায়িকা। নাটক ও চলচ্চিত্রের পাশাপাশি মন্চ তো ছিলই। এভাবেই অর্ধ শতাব্দী ধরে শিল্পের পথে হাঁটছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

1h ago